ড. আবদুল আযিয আল-ফাওযান
সংক্ষিপ্তকরণ ও ভাবানুবাদ (ইংরেজি) : ওয়াসিম ইসমাইল
বাংলা অনুবাদ : আসিফ বিন ফেরদৌস
প্রথম অভিযোগ : ইসলামি হুদুদ আইন অনেক পুরনো এবং বর্তমান যুগে অনুপযোগী।
জবাব : কোনো আইনের গ্রহণযোগ্যতা এর প্রয়োগের সময়কালের ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং এর উদ্দেশ্য দেখাটাই মূখ্য। আর এ তো আল্লাহর শরিয়াহ, সত্যার্জনের কোনো মানবীয় প্রচেষ্টা নয়। এই শরিয়াহ আরব-অনারবসহ পৃথিবীর সমগ্র মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। নতুন জিনিসের নতুনত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে কখনো পুরোনো জিনিসকে অকার্যকর করে দেয় না। শরিয়াহর এই শাস্তিগুলো এমন কিছু অপরাধের জন্য প্রযোজ্য, প্রজন্মভেদে যেগুলোর ক্ষতির মাত্রা কমবেশি হয় না। অন্যান্য আইনের মতো শরিয়াহ আইনেও কি পরিবর্তন আনা যেতে পারে? না, এ রকম যেকোনো উদ্যোগ একদম ভুল। এ তো আল্লাহর শরিয়াহ। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, এসব আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে অপরাধের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য আইনগুলো বরং আরও ভয়ংকর হতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে যদি মানদণ্ড হয় মানুষের প্রগতিশীল সভ্যতা, তাহলে মাথায় রাখা প্রয়োজন, এই সভ্যতা আর অগ্রগ্রতি তো আল্লাহরই দান, যিনি মানুষকে বুদ্ধি ও সামনে এগিয়ে চলার ক্ষমতা দিয়েছেন। তাহলে এই সৃষ্ট বুদ্ধি দিয়ে কীভাবে স্রষ্টার চেয়ে বেশি বুঝতে পারা সম্ভব? এসব মাখলুক (সৃষ্টি) কীভাবে তাদের খালিকের (স্রষ্টা) চেয়ে বেশি জানতে পারে?
দ্বিতীয় অভিযোগ : ইসলামি হুদুদ আইন অত্যন্ত কঠোর এবং মানবাধিকারবিরোধী।
জবাব : এসব শাস্তি দয়াপ্রদর্শনের জন্য নয়, বরং কৃত অপরাধের বিনিময় হিসেবে যন্ত্রণা দেয়ার জন্যই। যদি যন্ত্রণাই না হয়, তাহলে শাস্তি দেয়ার যৌক্তিকতাই বা কোথায়? কোনো শাস্তির যন্ত্রণার মাত্রা অবশ্যই তার অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ আইনেও এ ব্যাপারটি স্বীকৃত। যে শাস্তিগুলোকে বর্বর আখ্যায়িত করা হচ্ছে, সেগুলোর পেছনে একেবারে সুস্পষ্ট হিকমাহ রয়েছে। যেমন, হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড, বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড, চোরের হাত কাটা ইত্যাদি। যারা এই শাস্তির বিরোধিতা করে, তারা মূলত এ জাতীয় অপরাধীদের অধিকারকেই প্রাধান্য দেয়। পাশাপাশি অপরাধীদের জন্য তাদের সহানুভূতির বিষয়টাও লক্ষণীয়। আল্লাহ চান, অপকর্মকারীদের নির্মূল করে মানুষজন যেন সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কোনো ডাক্তার রোগীর দেহ থেকে ক্ষতিকর অঙ্গ অপসারণ করলে কি তাকেও বর্বর বলবেন?
ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তির বিধান আরোপ করা হবে না, যতক্ষণ না সম্ভাব্য অপরাধের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যেমন, একটি দেশে আগে সর্বপ্রথম এ ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হবে যে, দেশের সকল অধিবাসীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বিদ্যমান, যেন ধনী-গরিবের মাঝে সম্পদ বণ্টন, মৃতের সম্পদের যথাযথ বণ্টন আর প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো ঘাটতি না-থাকে; তার সাথে সাথে দরিদ্রদের দেখভাল করার জন্যও শাসকবর্গ দায়িত্বগ্রহণ করবে। আবার ইসলামি আইনের মাধ্যমে দ্রুত বিয়েতে অনুমতি ও উৎসাহপ্রদান এবং আর্থিক কারণে বিয়েতে অক্ষম মানুষদের সাহায্য করার মাধ্যমে মানুষের অবদমিত যৌনচাহিদা পূরণের বিষয়টাও নিশ্চিত করা হবে।
এই শাস্তিগুলোর লক্ষ্য মানুষকে ভয় দেখানো, যেন তারা অপরাধে জড়াতে সাহস না-করে। আর এই কঠোর শাস্তিগুলো কিন্তু মুসলিমসমাজে সচরাচর দেখা যায় না। আবার এগুলোর সংঘটনের মাত্রাও সীমিত। বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর ছুড়েই হত্যা করা হবে। ইসলামি আইনে এই ব্যাপারে যে শাস্তির বর্ণনা আছে, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই। কিন্তু এটা শুধু তখনই প্রয়োগ হবে, যখন কেউ স্বেচ্ছায় নিজ অপরাধ স্বীকার করবে, অথবা এমন চারজন সাক্ষী থেকে সাক্ষ্য পাওয়া যাবে যারা পরিষ্কারভাবে তার কাজের প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। নিজ থেকে স্বীকার করার ঘটনা খুবই বিরল। আর এ ক্ষেত্রে বিচারকও অপরাধীকে অপরাধ চেপে তাওবাহ করার পরামর্শ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করেন। এটাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা। আর সাক্ষ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে মাত্র তিনজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসলে তাদের সাক্ষ্য নিজেদেরই বিরুদ্ধে যাবে। অর্থাৎ অভিযুক্তের বদলে দোষী সাব্যস্ত হবে অভিযোগকারীই এবং তারাই অপবাদ ছড়ানোর অভিযোগে শাস্তি পাবে। এ ছাড়াও যেকোনো সন্দেহের কারণে ইসলামি শরিয়াহর হুদুদপ্রয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। যতই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হোক না কেন। এমন পরিস্থিতিতে কাযি (বিচারক) নিজ বিবেচনায় কিছু শাস্তি দিয়ে দেবেন, ওটাই যথেষ্ট।
_______________
নিরীক্ষণ : অনুবাদ ও সম্পাদনা পর্ষদ
[ সংগ্রহসূত্র : ওয়াসিম ইসমাইল (ফেসবুক টাইমলাইন) ]