উসতায শাইখুল ইসলাম
মহান আল্লাহ মানবজাতির বংশ বৃদ্ধির জন্য নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মানুষকে অন্যান্য প্রাণীর মতো অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে বংশ বিস্তারের পদ্ধতি দেননি। এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে বনি আদমের ওপর এক মহাঅনুগ্রহ, যা পশ্চিমা ‘সভ্যতার’ বিয়েহীন সমাজের দিকে তাকালে ভালোভাবেই বুঝে আসে। বিয়েতে মানুষের বহুবিধ কল্যাণ নিহিত। আল্লাহর নৈকট্যলাভ, সন্তানাদির মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য, আর্থিক সচ্ছলতালাভ, দ্বীনের হিফাযত, হারাম বস্তু ও পরনারীর দিকে দৃষ্টিপাত এবং অশ্লীলতা থেকে নিজ চোখকে হিফাযত করা, স্বামী-স্ত্রী একে অপর থেকে হৃদ্যতা, ভালোবাসা ও প্রশান্তিলাভ, সর্বোপরি নবি-রাসুলদের (আলাইহিমুস সালাম) সুন্নাহ পালন ও আল্লাহর বান্দাদের সংখ্যাবৃদ্ধিকরণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিয়ে সামাজিক কাজ। মানবসৃষ্টির সূচনা থেকে অগণিত নবি-রাসুলসহ সবাই সামাজিকভাবে এ কাজটি করে এসেছেন। মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব। তাই তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ বিয়েকেই উত্তম পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন। পশুর মতো মেলামেশাটা তিনি অবৈধ করেছেন। এ জন্য বিয়েটাও গোপনে একাকী না-করে সামাজিকভাবে করার নিয়ম দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় পরনির্ভরশীল, বুঝজ্ঞান ও দ্বীনদারিতে দুর্বল হওয়ায় প্রতিটা নারীকে তার অভিভাবক কর্তৃক বিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। অভিভাবক ছাড়া নিজে নিজে বিয়ে করে নেয়ার একদম সুস্পষ্ট কোনো দলিল ইসলামি শরিয়াহয় নেই; বরং কিছু নসের (কুরআন-সুন্নাহ) ভাষ্য থেকে এর অবৈধতার বিষয়টা বুঝে আসায় জুমহুর উলামা কিরাম এ ধরনের বিয়ে অবৈধ বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু অন্যান্য কিছু নস থেকে বৈধতার প্রমাণ মেলার কারণে ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) জায়িযের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতির শর্তের বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। জায়িয ও না-জায়িযের পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর দলিল-প্রমাণ পেশ করা হয়ে থাকে। জুমহুরের বিপরীতে ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) মেয়েদের বিয়েতে অভিভাবক শর্ত নয়, এ মর্মে মত দিয়েছেন। তাঁর মতের পক্ষে নিম্নোক্ত প্রমানাদি পেশ করা হয়—উম্মু সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
تُوُفِّيَ زَوْجُ سُبَيْعَةَ، فَوَلَدَتْ بَعْدَ وَفَاةِ زَوْجِهَا بِخَمْسَةَ عَشَرَ نِصْفِ شَهْرٍ. قَالَتْ : فَخَطَبَهَا رَجُلَانِ، فَحَطَّتْ بِنَفْسِهَا إِلَى أَحَدِهِمَا، فَلَمَّا خَشُوا أَنْ تَفْتَاتَ بِنَفْسِهَا قَالُوا : إِنَّكِ لَا تَحِلِّينَ. قَالَتْ : فَانْطَلَقْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : قَدْ حَلَلْتِ، فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ
‘সুবাইয়ার স্বামী মারা যাওয়ার পনের দিন পর সে বাচ্চা প্রসব করে। এরপর দুই ব্যক্তি তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব করলে সে একজনের দিকে ঝুকে পড়ল। তার পরিবারের লোকেরা আশংকা করল যে, সে নিজেই তাকে বিয়ে করে ফেলে কিনা। তারা তাঁকে বললেন, এখনো তো তোমার ইদ্দত পূর্ণ হয়নি। সুবাইয়া বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলে তিনি বললেন—তুমি বৈধ হয়ে গেছ, কাজেই এখন যার সাথে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারো। (সুনানুন নাসায়ি, কিতাবুত তালাক, হাদিস নং : ৩৫০৯; হাদিসটি সহিহ)
এতে স্পষ্ট যে, সুবাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার পরিবারের অমত সত্ত্বেও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বিয়ে করে নেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। সাহাবিয়াহ খানসা বিনতু খিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে,
أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ ثَيِّبٌ، فَكَرِهَتْ ذَلِكَ، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَدَّ نِكَاحَهَا
‘খানসা বিনতু খিযামকে তাঁর বাবা বিয়ে দিলেন। তিনি ছিলেন বিধবা। এ বিয়ে তিনি অপছন্দ করলেন। তাই তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টা জানালেন। ফলে তিনি তার বিয়েটা বাতিল করে দেন।’ (সহিহ বুখারি, কিতাবুল ইকরাহ, হাদিস নং : ৬৯৪৫)। বুরাইদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ ؛ يَرْفَعُ بِي خَسِيسَتَهُ . فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، قَالَتْ : فَإِنِّي قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ لِلْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ
‘এক যুবতী মেয়ে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল—আমার বাবা তার ভাতিজাকে দুর্দশা থেকে উদ্ধারের জন্য আমাকে তার সাথে বিয়ে দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বিষয়টা মেয়েটির এখতিয়ারে ছেড়ে দেন। মেয়েটি বলল, “আমার বাবা যা করেছেন, তা আমি বহাল রাখলাম। আমার উদ্দেশে ছিল, মেয়েরা জেনে নিক যে, বিয়ের ব্যাপারে বাবাদের কোনো এখতিয়ার নেই।”’ (সুনানু ইবনি মাজাহ, হাদিস নং : ১৮৭৪)। ইমাম বুসিরি বলেন, এর সনদ সহিহ, বর্ণনাকারীরা সিকাহ (মিসবাহুয যুজাজাহ, ২ : ১০২, হাদিস নং : 674)। নিম্নোক্ত হাদিসটি এর শাহিদ (প্রত্যয়নকারী/অন্য সাহাবি থেকে ভিন্ন সনদে বর্ণিত),
إنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ، فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক যুবতী এসে বলল, তার অসম্মতিতে তার বাবা তাকে বিয়ে দিয়েছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এখতিয়ার দিলেন (সে বিয়ে রাখতেও পারে অথবা বিচ্ছেদও ঘটাতে পারে)। (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং : ২০৯৬; হাদিসটি সহিহ)। এসব হাদিস থেকে বুঝে আসে, বিয়ের ব্যাপারে মেয়েরা স্বাধীন; অভিভাবকের অনুমতি কিংবা তাদের জবরদস্তি বিধেয় নয়। কুরআনের কিছু আয়াতও এটাই নির্দেশ করে। যেমন,
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ
‘তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, এরপর তারা (স্বামী-স্ত্রী) যদি নিয়মমতো পরস্পর সম্মত হয়, তখন স্ত্রীরা নিজেদের স্বামীদের (পুনরায়) বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদেরকে বাধা দিয়ো না। (সুরা আল-বাকারাহ, ২ : ২৩২)
আয়াতটি নাযিল হয়েছিল মাকিল ইবনু ইয়াসার ও তাঁর বোনের ব্যাপারে, যার স্বামী তাকে এক তালাক দিয়ে ইদ্দত পার করার পর পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে মাকিল বাধা দিয়েছিলেন। তখন আল্লাহ উক্ত আয়াত নাযিল করে জানিয়ে দেন, ছেলে-মেয়ে পরস্পর সম্মত থাকলে তোমরা তাদের বিয়েতে বাধা দিয়ো না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৫১৩০; সুনানুত তিরমিযি, হাদিস নং : ২৯৮১)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের হস্তক্ষেপকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বিয়ের স্বাধীনতা মেয়ের ওপরই ন্যস্ত করা হয়েছে। যদিও ইমাম বুখারি ও তিরমিযি হাদিস থেকে এর বিপরীতটা কিয়াস করেছেন। অথচ এখানে অভিভাবক হস্তক্ষেপ করার কারণেই আল্লাহ তা নিষিদ্ধ করে জানিয়ে দিলেন যে, মেয়ের স্বাধীনতায় তোমাদের হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার নেই।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ
‘যখন মহিলারা (স্বামীর মৃত্যপরবর্তী) ইদ্দতকাল পূর্ণ করে ফেলবে, তখন নিয়মমতো তারা নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের (অভিভাবকদের) কোনো পাপ নেই।’ (আল-বাকারাহ, ২ : ২৩৪)
এ আয়াতে বিধবা মহিলাদের ইদ্দতের সময়টা অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণে থাকার পর ইদ্দত পার হয়ে গেলে মহিলা কী করবে না-করবে (বিয়ে করতে চাইলেও), সেটা তার ওপরেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং অভিভাবকরা তখন তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে না-রাখলে শরিয়াতের দৃষ্টিতে তাদের কোনো সমস্যা বা পাপ হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فإن طلقها فلا تحل له من بعد حتى تنكح زوجا غيره
‘যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীকে বিয়ে না-করে। (আল-বাকারাহ, ২ : ২৩০)
এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বিয়ের স্বাধীনতা মহিলাকে দেয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا، وَالْبِكْرُ تُسْتَأْذَنُ فِي نَفْسِهَا
‘পূর্ব-বিবাহিতা তার (বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে) নিজের ব্যাপারে অভিভাবকের তুলনায় অধিক হকদার। কুমারির কাছ থেকে তার ব্যাপারে সম্মতি চাওয়া হবে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৪২১)
তবে এর বিপরীতে জুমহুর উলামা কিরাম অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া মেয়েদের বিয়েকে অবৈধ বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু নসও রয়েছে। প্রথম মতের প্রবক্তাদের পক্ষ থেকে সেগুলোর জবাবও দেয়া হয়ে থাকে। এখানে আমরা নসগুলো তাদের জবাবসহ উল্লেখ করছি। যেমন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا نِكَاحَ إِلَّا بِوَلِيٍّ
‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিয়ে নেই।’(সুনানুত তিরমিযি : 1101; হাদিস সহিহ)
উক্ত হাদিসের অর্থ পূর্বোল্লেখিত নসগুলোর বিপরীতে না-নিয়ে অনুকূলেই নিতে হবে এবং এর অবকাশও রয়েছে যে, অর্থটি আগের নসগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। আর তা হলো, ‘বিয়ে নেই’ কথাটি বিয়ের অসম্পূর্ণতার অর্থে হবে। মানে বিয়েকে পরিপূর্ণতাদানের জন্য অভিভাবক থাকা প্রয়োজন। অভিভাবক বিয়ের পরিপূরক। এ অর্থটি নিম্নোক্ত হাদিস থেকেও বুঝতে পারি,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَلَمْ يَأْتِهِ فَلَا صَلَاةَ لَهُ، إِلَّا مِنْ عُذْرٍ
‘যে ব্যক্তি আযান শুনল এবং কোনো ওজর ছাড়াই জামাআতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত নেই।’ (সুনানু ইবনি মাজাহ : ৭৯৩; সহিহ)
স্পষ্ট যে, এখানে ‘সালাত নেই’ অর্থ সালাতের অপূর্ণতা; সালাত বাতিল হয়ে যাওয়া নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ – ثَلَاثَ مَرَّاتٍ – فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا
‘অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল—কথাটি তিনবার বলেছেন। যদি তার স্বামী তার সাথে সহবাস করে, তাহলে সে মাহরের অধিকারী হবে।’ (সুনানু আবি দাউদ : 2083, সুনানুত তিরমিযি : ১১০২, মুসনাদু আহমাদ : ২৪২০৫)
প্রথমত লক্ষণীয় যে, এই হাদিসে ‘তার বিয়ে বাতিল’ বলার পরও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—যদি তার স্বামী তার সাথে সহবাস করে, তাহলে সে মাহরের অধিকারী হবে। বিয়ে বাতিল হয়ে গেলে তো সহবাস বৈধ হয়ে মাহর আবশ্যক হওয়ার কথা নয়। তাই স্পষ্ট যে, এখানে আসল অর্থে বাতিল নয়; বরং এর অর্থ হলো, বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পরও তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নয়তো বিয়ে বাতিল হয়ে গেলে তো সহবাসই বৈধ হতো না। দ্বিতীয়ত হাদিসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এটি আইশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণনা করেছেন উরওয়াহ, তাঁর থেকে ইমাম যুহরি, তাঁর থেকে সুলাইমান ইবনু মুসা, আর তাঁর থেকে ইবনু জুরাইজ। ইমাম যুহরি সত্যিই এটি বর্ণনা করেছেন কি না, সে বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি তা অস্বীকার করেছেন বলেও অনেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযি হাদিসটিকে হাসান বলার পর এক দীর্ঘ আলোচনার শেষে বলেছেন, ‘ইবনু জুরাইজ বলেন—আমি যুহরির সাথে দেখা করে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি অস্বীকার করলেন। তাই মুহাদ্দিসিন কিরাম উক্ত কারণে হাদিসটিকে দয়িফ বলেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু মায়িন বলেন, ইবনু জুরাইজ থেকে ইসমাইল ইবনু ইবরাহিম ছাড়া অন্য কেউ উক্ত শব্দে এটি বর্ণনা করেনি। আর ইবনু জুরাইজ থেকে ইসমাইলের শ্রবণও তেমন মজবুতভাবে প্রমাণিত নয়। ইয়াহইয়া ইবনু মায়িন ইবনু জুরাইজ থেকে ইসমাইলের বর্ণনাকে দয়িফ বলেছেন।’ ইমাম আহমাদ হাদিসটি বর্ণনা করার পর ইবনু জুরাইজের বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন। ইবনু জুরাইজ বলেন, ‘আমি যুহরির সাথে দেখা করে হাদিসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি সেটি চিনতে পারেন নি।’ তাই বলা যায় হাদিসটির সনদে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) রয়েছে। ইমাম যুহরি থেকে বর্ণনাকারী সুলাইমান ইবনু মুসার ব্যাপারে ইমামদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যও পাওয়া যায়। যদিও সুলাইমান, যুহরি ও উরওয়া এই তিনজনেরই একাধিক মুতাবি (সনদের অন্য সূত্রে একই স্তরের বর্ণনাকারী) রয়েছে। কিন্তু সবাই দয়িফ। আর একাধিক দয়িফ তুরুক (একই সনদের একাধিক বর্ণনাসূত্র) থাকায় এর ভাষ্যটি হাসান লি-গাইরিহি পর্যন্ত উন্নীত হতে পেরেছে, যা স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসান (হাসান লি-যাতিহি) নয়। হাদিসটাতে এতগুলো সমস্যা; অপরদিকে এর বিপরীতে একাধিক সহিহ লি-যাতিহি (স্বয়ংসম্পূর্ণ সহিহ) হাদিস বিদ্যমান। এমনকি সরাসরি আইশাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকেই উক্ত হাদিসের বিপরীত আমল সহিহ সনদে প্রমাণিত রয়েছে, যার বিবরণ সামনে আসবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনেকে এর সনদগত ত্রুটির আলোচনা না-করে শুধু এ কারণে হাদিসটিকে বর্জন করেন যে, এটা আহাদ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত এবং এটা কুরআনের আম (ব্যাপক) বিধানের বিপরীত নির্দেশনা দিচ্ছে (আহাদ হলো, যেসব হাদিসে মুতাওয়াতির এর শর্ত পাওয়া যায় না)। তাই হাদিসটা আমলযোগ্য নয়। অথচ এটা ভুল ও ভ্রান্ত উসুল। সঠিক হলো, আহাদ হাদিস সহিহ সূত্রে বর্ণিত হলে তা দিয়ে আকিদাহ ও আমল উভয়টিই সাব্যস্ত হয়। সহিহ হাদিস (আহাদ হলেও) কখনো কুরআনের বিপরীত হতে পারে না। তারা মাশহুর হাদিসকে (যে হাদিসের সনদের প্রতিটি স্তরে তিন বা ততোধিক বর্ণনাকারী থাকে) আহাদের বাইরে গণ্য করে শুধু গারিব হাদিসকে (যার সনদের প্রতিটি স্তর কিংবা কোনো একটি স্তরে একজনমাত্র বর্ণনাকারী থাকে) আহাদ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ আহাদের সংজ্ঞায় মাশহুর হাদিসকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। অন্য এক হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا تُزَوِّجُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ، وَلَا تُزَوِّجُ الْمَرْأَةُ نَفْسَهَا، فَإِنَّ الزَّانِيَةَ هِيَ الَّتِي تُزَوِّجُ نَفْسَهَا
‘কোনো মহিলা অপর কোনো মহিলাকে বিয়ে দেবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও বিয়ে দেবে না। কারণ, যে নারী নিজে নিজে বিয়ে করে সে ব্যভিচারিণী।’ (সুনানু ইবনি মাজাহ : ১৮৮২)
হাদিসটির ব্যাপারে ইমাম আলবানি বলেন, صحيح دون الجملة الأخيرة ‘শেষের বাক্য ব্যতীত হাদিসটি সহিহ।’ (ইরওয়াউল গালিল : ১৮৪১)। অর্থাৎ নিজে নিজে বিয়ে করাকে ব্যভিচারিণী বলা অংশটা প্রমাণিত নয়। উপরন্তু এর প্রমাণিত অংশের সনদেও মুহাম্মাদ বিন মারওয়ান নামক এক বর্ণনাকারী আছেন, যিনি সিকাহ নন; বরং সদুক (জারহ-তাদিলশাস্ত্রের একটি পরিভাষা, যা কোনো বর্ণনাকারীর ব্যাপারে সিকাহ ও দয়িফের প্রায় মাঝামাঝি স্তর বুঝিয়ে থাকে) এবং তার হাদিস বর্ণনায় অনেক ওয়াহাম (ভ্রম) হতো। (ইবনু হাজার আসকালানি, তাকরিবুত তাহযিব : ৬২৮২)। তাই বর্ণনার প্রথম অংশের সনদটিও সহিহ নয়, বরং হাসান। তবে এ বিষয়ক অন্যান্য বর্ণনার সমন্বয়ে হাদিসের মূল ভাষ্যকে সহিহ বলা যায়। কিন্তু এতে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞাটি আবশ্যক কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। কারণ, আইশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে এর বিপরীত আমল সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ বলেন,
إن عائشة أنكحت حفصة ابنة عبد الرحمن بن أبي بكر المنذر بن الزبير، وعبد الرحمن غائب
‘আইশাহ আবদুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাঁর মেয়ে হাফসাহকে মুনযির ইবনু যুবাইরের কাছে বিয়ে দিয়েছেন।’ (আল-মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবাহ, হাদিস নং : ১৬৭০৬; বর্ণনাটি সহিহ)
বোঝা গেল এক মহিলা অপর মহিলাকে বিয়ে দেয়ার বৈধতা রয়েছে এবং পূর্বের হাদিসটি আবশ্যক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বর্ণিত হয়নি। সবগুলো নস সামনে রাখলে ফলাফল এটাই আসে, মেয়েরা বিয়ের ক্ষেত্রে স্বাধীন; তবে অভিভাবক ছাড়া নিজে নিজে বিয়ে করে নেয়া উচিত নয়। অভিভাবক দ্বারা বিয়ের পরিপূর্ণতা লাভ হয়। কিন্তু এমন কাজ কেউ করে ফেললে বিয়ে বৈধ হবে; বাতিল হবে না। কিন্তু কাজটা হবে অনুচিত, অনুত্তম। সাধারণত মেয়েরা আবেগী হয় এবং বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্তও নিতে পারে না এবং দ্বীনের বুঝেও সাধারণত কমতি থাকে, তাই বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেয়াটা তাদের জন্য আদৌ উচিত হবে না, আর তা বুদ্ধিমানের কাজও নয়। এ জন্যই অভিভাবকদেরকে বলা হয়েছে তারা যেন মেয়েদের বিয়ে সম্পাদন করে দেন। আল্লাহ বলেন,
وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ
‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিয়ে সম্পাদন করো।’ (সুরা নুর : ৩২)
তবে অবশ্যই মেয়েদের অনুমতি নিতে হবে এবং তা আবশ্যক; তাদেরকে কখনো বাধ্য করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণই মেয়েদের ইচ্ছাধীন বিষয়। এ ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন। অভিভাবকদের কর্তৃত্বের কোনো অধিকার নেই। তারা শুধু বিয়েটা সম্পাদন করিয়ে দেবেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ইমাম মুহাম্মাদের মত হলো, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো মেয়ে বিয়ে করে নিলে সেটা মাওকুফ থেকে যাবে, যতক্ষণ না অভিভাবক অনুমতি দেন। অনুমতি দিয়ে দিলে বিয়েটা বৈধ হয়ে যাবে। উভয়পক্ষের পেশকৃত নসগুলো সামনে রাখলে আরও কিছু বিষয় আলোচনার দাবি রাখে। যেমন,
১. প্রথম মতের পক্ষের নসগুলোতে বাহ্যত অভিভাবকদের জোরজবরদস্তি অবৈধ প্রমাণিত হলেও বিয়েতে যে তাদের অনুমোদনেরও প্রয়োজন নেই, তা স্পষ্ট নয়। অপরদিকে জুমহুরের পেশকৃত নসগুলোর মধ্যে ‘অভিভাবক ছাড়া কোনো বিয়ে নেই’ হাদিসটি সহিহ এবং এর যে জবাব দেয়া হয়েছে তাও সুনিশ্চিতভাবে সঠিক বলা যায় না; বরং সম্ভাবনাময় হিসেবে রাখা যেতে পারে। মোটকথা, কোনো নস থেকেই কোনো একটা মত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় না। এ জন্যই ইবনু রুশদ বলেছেন,
وَسَبَبُ اخْتِلَافِهِمْ أَنَّهُ لَمْ تَأْتِ آيَةٌ وَلَا سُنَّةٌ هِيَ ظَاهِرَةٌ فِي اشْتِرَاطِ الْوِلَايَةِ فِي النِّكَاحِ، فَضْلًا عَنْ أَنْ يَكُونَ فِي ذَلِكَ نَصٌّ، بَلِ الْآيَاتُ وَالسُّنَنُ الَّتِي جَرَتِ الْعَادَةُ بِالِاحْتِجَاجِ بِهَا عِنْدَ مَنْ يَشْتَرِطُهَا هِيَ كُلُّهَا مُحْتَمَلَةٌ، وَكَذَلِكَ الْآيَاتُ وَالسُّنَنُ الَّتِي يَحْتَجُّ بِهَا مَنْ يَشْتَرِطُ إِسْقَاطَهَا هِيَ أَيْضًا مُحْتَمَلَةٌ فِي ذَلِكَ، وَالْأَحَادِيثُ مَعَ كَوْنِهَا مُحْتَمَلَةً فِي أَلْفَاظِهَا مُخْتَلَفٌ فِي صِحَّتِهَا إِلَّا حَدِيثَ ابْنِ عَبَّاسٍ
‘মতভেদের কারণ হলো, এমন কোনো আয়াত ও হাদিস নেই, যা বিয়েতে প্রকাশ্যে অভিভাবকত্বের শর্ত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে। অধিকন্তু এ বিষয়ে নস রয়েছে। বরং এমন বহু আয়াত ও সুনান রয়েছে—এগুলো দিয়ে যারা দলিল পেশ করে অভিভাবকত্বের শর্ত দিয়েছেন—এর সবগুলোই (উভয়দিকের) সম্ভাবনাময়। তেমনিভাবে যারা অভিভাবকত্বের শর্ত বিলোপ করতে যেসব আয়াত ও সুনানকে দলিল পেশ করেন, সেগুলোও সে বিষয়ে সম্ভাবনাময়। আর যেসব হাদিসের ভাষ্যে (দুই দিকের) সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলো বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে মতভেদপূর্ণ। তবে ইবনু আব্বাসের হাদিসটি ব্যতিক্রম (বুরাইদাহর হাদিসের শাহিদ হিসেবে যেটি উল্লেখ করা হয়েছিলো)।’ (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ওয়া নিহায়াতুল মুকতাসিদ, খণ্ড : 3, পৃষ্টা : ৩৬)
২. উল্লিখিত নসগুলোতে বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদিসটি ছাড়া অন্য প্রায় সবগুলো নসের ভাষ্য পূর্ববিবাহিতা মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সুস্পষ্ট; কুমারীদের ক্ষেত্রে নয়। একমাত্র বুরাইদাহর হাদিসেই কুমারীর স্বাধীনতা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তবে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত ‘পূর্ববিবাহিতা তার নিজের ব্যাপারে (বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে) অভিভাবকের তুলনায় বেশি হকদার। কুমারীর কাছ থেকে তার ব্যাপারে সম্মতি চাওয়া হবে’ হাদিসটি কুমারীর জন্য অভিভাবকহীন বিয়ের প্রমাণ সাব্যস্ত হয় না; বরং হাদিসটিতে এর বিপরীতটাই বুঝে আসে। অর্থাৎ তাদেরকে অভিভাবকরাই বিয়ে দেবে (জোরজবরদস্তি ছাড়া)।
৩. আইশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার আসারটি (তাঁর ভাতিজিকে বাবার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেয়া সম্পর্কিত) সুস্পষ্ট ও সহিহ। তবে সেটি গ্রহণযোগ্য কি না তা নিয়ে উসুলে মতভেদ রয়েছে। সাহাবির আমল যদি তাঁর বর্ণিত হাদিসেরই বিপরীত হয়, এ ক্ষেত্রে উসুলবিদদের একদল আলিম বলেন, সাহাবির আমলই গ্রহণযোগ্য, তাঁর বর্ণিত হাদিস নয়। কারণ, সাহাবি তাঁর বর্ণিত হাদিসের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞাত যে, এটি আমলযোগ্য না কি মানসুখ। তাই কোনো সাহাবির হাদিসের বিপরীত আমল দ্বারা এটাই বোঝা যায় যে, হাদিসটি মানসুখ; আমলযোগ্য নয়। উসুলবিদদের আরেকদল আলিম বলেন, এ ক্ষেত্রে হাদিসটিই আমলযোগ্য; সাহাবির আমল নয়। কারণ, আমরা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের বর্ণনা গ্রহণ করতে আদিষ্ট, বর্ণনাকারীদের ব্যক্তিগত আমলের অনুসরণ করতে আদিষ্ট নই। এটি উসুলবিদদের মধ্যকার মতভেদ। এ বিষয়ে আরও বিশদ আলোচনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে তেমন প্রাসঙ্গিক না-হওয়ায় সংক্ষেপে শুধু দুটো মতই উল্লেখ করা হলো। তবে হাদিসশাস্ত্রবিদদের উসুল হলো, প্রথমেই বর্ণনার বিশুদ্ধতার বিবেচনা করা হবে। বিশুদ্ধতার বিচারে গ্রহণযোগ্য ও পরিত্যাজ্য নির্ণীত হবে। এই উসুলের আলোকে আইশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার আসারটির তুলনায় তাঁর বর্ণিত ‘অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনো মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল’ হাদিসটা সনদগত মানে নিচে থাকায় তাঁর আমলটিই প্রাধান্য পাবে। এমনকি এটি সনদগত মানে আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত ‘কোনো মহিলা অপর কোনো মহিলাকে বিয়ে দেবে না’ হাদিসেরও ওপরে রয়েছে।
মোটকথা, যেহেতু নসগুলোতে অভিভাবকের অনুমোদনের ব্যাপারে উভয়দিকের সম্ভাবনা রয়েছে, আবার আইশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার আসারও একদিকের বৈধতা দিচ্ছে, তাই বিষয়টি গুরুতর কোনো মতভেদের কারণ হতে পারে না। পূর্ববর্তী ইমাম, পরবর্তী বিজ্ঞ উলামা কিরাম ও বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম বিচারক যারাই যে মতের ওপর আমল করার নির্দেশনা দেবেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিমরা সেটাই মেনে চলতে পারবে। তবে মেয়েদের জন্য উচিত হলো অভিভাবকের অনুমোদন নিয়েই বিয়ে করা। কিছু নসের গভীর বুঝ থেকে এর প্রবল ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো মেয়ে যদি একাকী বিয়ে করেই ফেলে, তাহলে তার বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ইমাম ইবনু কুদামাহও তাই বলেছেন,
فَإِنْ حَكَمَ بِصِحَّةِ هَذَا الْعَقْدِ حَاكِمٌ، أَوْ كَانَ الْمُتَوَلِّي لِعَقْدِهِ حَاكِمًا، لَمْ يَجُزْ نَقْضُهُ…. لِأَنَّهَا مَسْأَلَةٌ مُخْتَلَفٌ فِيهَا، وَيَسُوغُ فِيهَا الِاجْتِهَادُ، فَلَمْ يَجُزْ نَقْضُ الْحُكْمِ لَهُ
‘বিচারক যদি উক্ত বিয়ের বৈধতার ফায়সালা দেয়, কিংবা আকদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেই বিচারক হয়, তাহলে বিয়েটা ভেঙে দেয়া জায়িয নয়। কারণ, এটি মতভেদপূর্ণ মাসআলা। এতে ইজতিহাদের সুযোগ রয়েছে। তাই তার জন্য বিয়ে ভাঙার আদেশ দেয়া জায়িয নয়।’ (আল-মুগনি, খণ্ড : ৭, পৃষ্ঠা : ৮, অনুচ্ছেদ নং : ৫১৩৮)
তাই, কোনো নারী একাকী বিয়ে করে নিলে ব্যভিচার বা জিনার অপবাদ দেয়া ইলমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। হাঁ, কোনো বিষয় বৈধ হলেই সেটা যে প্রশংসনীয়, তা নয়। যারা নারীর বিয়েতে অভিভাবকের অনুমতির শর্ত মানেন না, তাঁরাও কিন্তু অভিভাবক ছাড়া কোনো বিয়েকে উৎসাহিত করেন না; বরং একে সামাজিকভাবে খারাপ দৃষ্টিতেই দেখেন। এটাই কাম্য।