ইমাম ইবনুল কাইয়িম 

আল্লাহ বলেন, 

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ 

‘স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য দেন, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই; মালায়িকাহ ও জ্ঞানীরাও একই সাক্ষ্য দেন। তিনি ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। [সুরা আলি ইমরান, ৩ : ১৮] 

এই আয়াতে ইলম ও আলিমদের মর্যাদা ফুটে উঠেছে। একটু লক্ষ করলে আমরা এই আয়াতে নিচের বিষয়গুলো দেখতে পাব,  

১. আল্লাহ নিজ তাওহিদের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমগ্র সৃষ্টির ওপর আলিমদের বেছে নিয়েছেন।   

২. আল্লাহ আলিমদের সম্মানিত করেছেন এই মর্মে যে, তিনি নিজে সাক্ষ্য দিয়েছেন, সাথে আলিমদেরকেও সাক্ষী করেছেন।  

৩. আল্লাহ মালাকদের সাথে আলিমদের সাক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে আলিমদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। 

৪. এ আয়াত আলিমদের মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির সবার সাক্ষ্য নেন না বরং ন্যায়নিষ্ঠ ও জ্ঞানীদের কাছ থেকেই সেটি নিয়ে থাকেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  

يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ، يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ، وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ، وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلِينَ 

‘প্রত্যেক প্রজন্মের নির্ভরযোগ্য নেককার উত্তরসূরীরা এই দ্বীনি ইলম ধারণ করবে। তারা একে মুক্ত রাখবে সীমালংঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে। [শারহু মুশকিলিল আসার : ৩৮৮৪; শুয়াবুল ইমান, বাইহাকি; মুকাদ্দিমাতুত তামহিদ] 

৫. আল্লাহ—যিনি সবধরনের ত্রুটি বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে, সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষ্যদাতা—নিজেই নিজের একত্ববাদের সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তারপর তাঁর সাক্ষ্যের পাশাপাশি তিনি মালায়িকাহ ও আলিমদের সাক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আলিমদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য এটিই যথেষ্ট।  

৬. আল্লাহ আলিমদের সবচেয়ে মহান ও সুন্দর সাক্ষ্যের বহনকারী করেছেন। আর সেটি হচ্ছে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ—এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।’ আল্লাহ—যিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং সবধরনের ত্রুটিবিচ্যুতিমুক্ত—গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় ছাড়া কসম খান না এবং কেবল সৃষ্টির সেরাদের কাছ থেকেই সাক্ষ্য নেন।  

৭. আল্লাহ আলিমদের কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করে একে মিথ্যারোপকারীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন এই মর্মে যে, আলিমরাই তাওহিদের প্রমাণ ও চিহ্ন।  আর এটি আল্লাহর তাওহিদকেই নির্দেশ করছে।   

৮. আল্লাহ নিজের সাক্ষ্য এবং মালায়িকাহ ও আলিমদের সাক্ষ্যগ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু একটি ক্রিয়াবাচক শব্দ (শাহিদা) ব্যবহার করেছেন। তিনি আলিমদের সাক্ষ্যের জন্য আলাদা কোনো ক্রিয়াবাচক শব্দ ব্যবহার করেননি। এর মাধ্যমে তিনি তাদের সাক্ষ্য এবং তাঁর সাক্ষ্যকে একই সাথে জুড়ে দিয়েছেন। আর এই সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে এটিই প্রমাণ হয়, আল্লাহ ও তাদের সাক্ষ্যের মাঝে শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে। যেন তাদের জিহ্বা থেকেই তিনি নিজের তাওহিদের সাক্ষ্য নিয়েছেন এবং তাদেরকে সেটি উচ্চারণ করতেই তৈরি করেছেন। 

৯. আল্লাহ—যিনি যাবতীয় ত্রুটিবিচ্যুতির ঊর্ধ্বে—এই সাক্ষ্যের মাঝ দিয়ে আলিমদেরকে তাঁর অধিকার (সব ইবাদত পাবার অধিকার কেবল তাঁরই) পরিপূর্ণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর তারা যদি সেটি পরিপূর্ণ করেন, এর অর্থ হলো, তারা আল্লাহরই অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। সমগ্র মানবজাতির জন্য তাদের পার্থিব ও পরকালীন সুখশান্তির জন্য এই সাক্ষ্যগ্রহণ করা অবশ্যই কর্তব্য। যদি কেউ আলিমদের কাছ থেকে এই সত্যের দিকনির্দেশনা নেয় এবং তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এ সত্য গ্রহণ করে, তবে এর জন্য আলিমরা ওই ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব পাবেন। আর এক আল্লাহ ছাড়া কেউ ধারণাও করতে পারবে না কী সেই পুরস্কারের মর্যাদা!      

______ 

সূত্র : কালামুল্লাহ ডট কম 

অনুবাদ ও সম্পাদনা পর্ষদ