১। সর্বপ্রকার নিয়ত ও ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে সম্পাদন করা। কারণ, তিনিই আমাদের একমাত্র স্রষ্টা, এতে তাঁর কোনো শরিক নেই। তাই ইবাদত একমাত্র তাঁরই জন্য হতে হবে।
২। আকিদাহর শূন্যতার ফলে উদ্ভূত নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে চিন্তাধারা ও বুদ্ধিমত্তাকে মুক্ত করা। কারণ, এই আকিদাহবিহীন ব্যক্তি আকিদাহশূন্য ও বস্তুপূজারী হয় অথবা কুসংস্কার ও নানাবিধ আকিদাহগত ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত থাকে।
৩। মানসিক ও চিন্তাগত প্রশান্তি অর্জন। এর ফলে ব্যক্তির মনে না কোনো প্রকারের উদ্বেগ ও বিষন্নতা থাকে, না চিন্তাধারায় থাকে কোনো অস্থিরতা। কারণ, এই আকিদাহ আল্লাহর সাথে মুমিনের সম্পর্ককে জোরদার ও সুদৃঢ় করে দেয়। ফলে, সে তার স্রষ্টা ও রবের তাকদির বা সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে। তার আত্মা লাভ করে প্রশান্তি। ইসলামের জন্য তার অন্তর হয় উন্মোচিত এবং জীবনধর্ম হিসেবে সে ইসলাম ছাড়া বিকল্প কোনো কিছুর দিকে তাকায় না।
৪। আল্লাহর ইবাদত বা মানুষের সাথে লেনদেন ও আচার-আচরণের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যে ও কর্মে পথবিচ্যুতি থেকে নিরাপত্তা অর্জন। কারণ, এ আকিদাহর ভিত্তি রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস ও তাঁদের অনুসরণের ওপর, যা উদ্দেশ্য ও কর্মগত দিক দিয়ে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ।
৫। সব বিষয়ে সুচিন্তিত ও দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ নিতে সাহায্যলাভ হয়। যাতে বান্দা সাওয়াবের আশায় সৎ ও নেক-কাজের কোনো সুযোগ হাতছাড়া না-করে এবং আখিরাতের কঠোর ও ভয়াবহ শাস্তির ভয়ে সব ধরনের পাপের স্থান থেকে নিজেকে দূরে রাখে। কারণ, ইসলামি আকিদাহর অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে পুনরুত্থান ও কাজের প্রতিফললাভের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। আল্লাহ বলেন,
وَلِكُلٍّ دَرَجَٰتٌ مِّمَّا عَمِلُوا۟ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَٰفِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
‘প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তাদের কর্মের আনুপাতিক মর্যাদা এবং আপনার রব তাদের কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।’ [সূরা আল-আনআম, ৬ : ১৩২]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই লক্ষ্যসাধনের জন্য উৎসাহিত করে বলেন,
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِي كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلا تَعْجَزْ وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلا تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَان
‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে উত্তম ও অধিক প্রিয়। প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে। তোমার জন্য যা কল্যাণকর ও উপকারী তা করতে সচেষ্ট হও এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। অপারগ ও অক্ষম হয়ো না। বিপদগ্রস্ত হলে এ কথা বলবে না যে—আমি যদি এটা করতাম, ওটা করতাম, তাহলে এমনটা হতো। বরং বলো, আল্লাহ তাকদিরে যা রেখেছেন তা হয়েছে, আল্লাহ যা চান, তা-ই করেন। কারণ, “যদি” শব্দটি শয়তানি কাজের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।’ [সহিহ মুসলিম]
৬। এমন এক শক্তিশালী জাতি গঠন করা, যে জাতি আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করা, তার ভিত্তিগুলো মজবুত ও তার পতাকা সমুন্নত করার লক্ষ্যে দুনিয়ার সব প্রতিকূল পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে জান ও মাল ব্যয় করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ
‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জীবন ও ধন-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করে। তারাই সত্যবাদী।’ [সুরা আল-হুজুরাত, ৪৯ : ১৫]
৭। ব্যক্তি ও দল সংশোধন করে ইহ ও পরকালের শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব ও সম্মান লাভ করা। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
مَنْ عَمِلَ صَٰلِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةً طَيِّبَةًۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ
‘যে সৎ কর্ম করে সে ইমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরুষ্কার দেবো, যা তারা করত।’ [সুরা আন-নাহল, ১৬ : ৯৭]
উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ইসলামি আকিদাহর কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের এবং সকল মুসলিমকে এগুলো অর্জনের তাওফিক দান করেন।
_____________
[ সংগ্রহসূত্র : ইসলামহাউজ, শারহু উসুলিল ইমান ]