অনুবাদ : কাউসারুদ্দিন আহমাদ
নিরীক্ষণ : সালমান মাসরুর
হাম্বলি মাযহাবের মুতামাদ (প্রসিদ্ধি ও প্রাধান্যপ্রাপ্তির দিক দিয়ে মাযহাবের শক্তিশালী মত) অনুযায়ী :
১। যিনি আলিম নন, ইজতিহাদি মাসআলায় তার ওপর ওয়াজিব হলো কোনো আলিমের অনুসরণ করা।
২। একটি নির্দিষ্ট মাযহাব মেনে চলা কারও ওপর ওয়াজিব নয়।
৩। সব মাসআলায় নিজ মাযহাবে সীমাবদ্ধ থাকাও কারও ওপর ওয়াজিব নয়।
৪। একজন হাম্বলি আলিমের জন্য ‘আর-রিওয়ায়াহ (ইমাম আহমাদের মত)’ অথবা ‘আল-ওয়াজহ (মাযহাবের আলিমদের মতামত)’—যার তারজিহ (অগ্রাধিকার) দেয়া হয়েছে—এর ভিত্তিতে ফাতওয়া দেয়া জায়িয। এটি মুতামাদ (মাযহাবের নির্ভরযোগ্য মত/অফিসিয়াল অবস্থান) না হলেও জায়িয। আর মুকাল্লিদের জন্য এর অনুসরণও জায়িয।
৫। এ ব্যাপারে মুতামাদ (প্রসিদ্ধি ও প্রাধান্যপ্রাপ্তির দিক দিয়ে মাযহাবের শক্তিশালী মত) হচ্ছে—যদি দুজন আলিম আম (সাধারণ) লোককে দুটো ভিন্ন ফাতওয়া দেন, তবে আম লোক এর যেকোনো একটি পছন্দ করতে পারে; যদিও ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সে যাকে তুলনামূলক বেশি জ্ঞানী ও মুত্তাকি মনে করবে তাঁর মতই গ্রহণ করবে।
৬। কারও জন্যে প্রবৃত্তির অনুকূলে শায (বিচ্ছিন্ন) ও দয়িফ (দুর্বল) মতের অনুসরণ করা জায়িয নয়। উলামা কিরাম এ ব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্য) উল্লেখ করেছেন।
৭। মুজতাহিদের কাছে নিজ ইজতিহাদে ভিন্ন কিছু প্রমাণিত হলে তাঁর জন্যে তাকলিদ হারাম। তাই, যখন আপনি ইবনু তাইমিয়াহ, ইবনু কুদামাহ, আল-মাজদ এবং সামসময়িক অন্যান্য উলামা যেমন, আস-সাদি, ইবনু আকিল এবং ইবনু উসাইমিনের মতো আলিমদের দেখবেন তাঁরা মাযহাবের অফিসিয়াল মত (মুতামাদ) পরিত্যাগ করছেন, তাঁরা তা-ই করছেন যা তাঁদের ওপর ওয়াজিব ছিল। এটা না-করলে তাঁরা গুনাহগার হতেন। এটা তাঁদের হাম্বলি হওয়াকে নাকচ করে না। আমাদের মাযহাবমতে যারা তাঁদের তাকলিদ করেন, তারা সঠিক পথেই রয়েছেন। কেবল সুস্পষ্ট নস (কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্য) বা ইজমাবিরোধী হলেই ইজতিহাদ বাতিল হবে।
৮। মুকাল্লিদের জন্যে ফাতওয়া দেয়া জায়িয নয়। তারা আলিমদের উদ্ধৃতি দিতে পারেন। নির্ভুল ও সঠিকভাবে তা নকলও করতে পারেন। আর মুজতাহিদের জন্য ইজতিহাদের স্তরভেদে হুকুমও ভিন্ন।
এর সব বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে ইবনু মুফলিহ, আল-মারদাউয়ি ও ‘আল-মুনতাহা’র লেখক ইবনুন নাজ্জারের উসুলের কিতাবগুলোতে। কিছু বর্ণনা করা হয়েছে ‘আল-ইনসাফ’-এ। তাআসসুবে (পক্ষপাতদুষ্টতা) আক্রান্ত হলে এবং হাম্বলি আলিমদের তুলনায় নিজেরা বেশি কঠোর হতে চাইলেই সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের কাছে আরেক চরমপন্থী মানুষজনও রয়েছে। যেখানে পাবেন মুকাল্লিদ ব্যক্তিও শাইখুল ইসলামের মতো আচরণ করছে। উপর্যুক্ত প্রত্যেকটি মাসআলা আলাদা আলাদা পোস্টের দাবি রাখে। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
[সংগ্রহসূত্র : Hanbali Madhab (ফেসবুক গ্রুপ)]