নারী-পুরুষের সালাতে পার্থক্য : হাদিসতাত্ত্বিক পর্যালোচনা

উসতায শাইখুল ইসলাম

নারী-পুরুষের সালাতে পার্থক্য আছে কি নেই, তা বহুল আলোচিত একটি মাসআলা। শরিয়াহ যেসব বিধানে নারী-পুরুষের জন্য যে ধরনের পার্থক্য করে দিয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে সে অনুপাতেই পার্থক্য বজায় রাখতে হবে। আর যে ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করেনি, সেখানে নিজ থেকে পার্থক্য করা যাবে না। নারী-পুরুষের সালাতের পার্থক্য থাকা-না-থাকা সাধারণত দুই ধরনের হয় :

১. বিধানগত

২. পদ্ধতিগত

বিধানগতভাবে উভয়ের সালাতে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন :

১. পুরুষের জন্য আযান ও ইকামাত জরুরি, কিন্তু নারীর জন্য জরুরি নয়।

২. পুরুষের জন্য জামাতে সালাত আদায় করা জরুরি, কিন্তু নারীর জন্য তা বাধ্যতামূলক নয়।

৩. জুমার সালাত পুরুষের জন্য ওয়াজিব; মহিলার জন্য নয়।

৪. সালাতে পুরুষ ও মহিলার সতরেও পার্থক্য রয়েছে।

৫. মহিলাদের আযান-ইকামাত যেমন বাধ্যতামূলক করা হয়নি, তেমনি ইমাম ভুল করলে পেছনের মহিলাদের জন্য বিধান হলো, তারা এক হাতের পিঠ ও অপর হাতের তালু দিয়ে তালি বাজাবে। অথচ পুরুষের জন্য বিধান হলো, এ ক্ষেত্রে তারা উচ্চস্বরে তাসবিহ পড়বে।

৬. মহিলাদের ঋতুস্রাব ও প্রসব-পরবর্তী কিছুদিন সালাত পড়তে হয় না এবং এর কাযাও লাগে না। অথচ পুরুষদের নিয়মিত সালাত আদায় করতে হয়। কোনো কারণে ছুটে গেলে এর কাযা করতে হয়। এ জাতীয় পার্থক্য হলো বিধানগত।

পদ্ধতিগত পার্থক্য শরয়িভাবে প্রমাণিত নেই। অর্থাৎ পুরুষ ও মহিলার সালাত একই পদ্ধতিতে আদায় করতে হয়। যদি কোনো পার্থক্য থাকত, তাহলে অবশ্যই শরিয়াহ সেটা বর্ণনা করত। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের শেখানোর জন্য এক নিয়মে সালাত পড়েছেন এবং মহিলাদের জন্য অন্যভাবে। মূলত তাঁর সালাত দেখেই তো সবাই শিখেছেন। এ বিষয়ে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট হাদিসটি হলো বসরার অধিবাসী সাহাবি মালিক ইবনু হুওয়ারিস রাদিআল্লাহু আনহুর বর্ণনাটি। তিনি বলেছেন,

أَتَيْنَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ  شَبَبَةٌ  مُتَقَارِبُونَ، فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ يَوْمًا وَلَيْلَةً، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَحِيمًا رَفِيقًا، فَلَمَّا ظَنَّ أَنَّا قَدِ اشْتَهَيْنَا أَهْلَنَا – أَوْ قَدِ اشْتَقْنَا – سَأَلَنَا عَمَّنْ تَرَكْنَا بَعْدَنَا، فَأَخْبَرْنَاهُ، قَالَ : ارْجِعُوا إِلَى أَهْلِيكُمْ، فَأَقِيمُوا فِيهِمْ، وَعَلِّمُوهُمْ، وَمُرُوهُمْ. وَذَكَرَ أَشْيَاءَ أَحْفَظُهَا أَوْ لَا أَحْفَظُهَا. وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ

‘আমরা সমবয়সী একদল যুবক নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। বিশদিন ও বিশ রাত তাঁর কাছে থাকলাম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন, আমরা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছি বা ফিরে যাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের অনুপস্থিতিতে কাদের রেখে এসেছি? আমরা তাঁকে সেটা জানালাম। এরপর তিনি বললেন, “তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও, তাদের সাথে বসবাস করো। আর তাদের ইলম-শিক্ষা দাও এবং সৎকাজের নির্দেশ দাও। “বর্ণনাকারী বলেন—মালিক (রাদিআল্লাহু আনহু) আরও কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, যা আমার মনে আছে বা মনে নেই।” এরপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ, সেভাবেই সালাত আদায় করবে। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আযান দেয় এবং যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে যেন তোমাদের ইমামতি করে।”’[১]

লক্ষণীয়, নতুন ইসলামগ্রহণকারী সাহাবিরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে সালাতের নির্দেশনা এভাবে দিচ্ছিলেন যে—তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ, সেভাবে সালাত আদায় করবে। এই নির্দেশনায় তাঁদের মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে সালাতের ভিন্ন পদ্ধতি শিখিয়ে দেননি। ভিন্ন কিছু থাকলে অবশ্যই তিনি উল্লেখ করতেন। তাঁদের নারীরা যেহেতু পুরুষদের কাছ থেকেই শিখবে, তাই উক্ত নির্দেশনাটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ছিল। উপরন্তু মহিলা সাহাবিরা নিয়মিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে সালাত আদায় করেছেন। তাঁদেরকে তিনি ভিন্ন পদ্ধতিতে সালাত আদায়ের নির্দেশনা কখনো দেননি। সাহাবি আবুদ দারদা রাদিআল্লাহু আনহুর স্ত্রী উম্মুদ দারদার ব্যাপারে ইমাম বুখারি তো বলেছেনই,

كَانَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ تَجْلِسُ فِي صَلَاتِهَا جِلْسَةَ الرَّجُلِ ، وَكَانَتْ فَقِيهَةً

‘উম্মুদ দারদা পুরুষের মতো সালাতে বসতেন। তিনি ফকিহ ছিলেন।’[২]

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, নারী-পুরুষের সালাতে পার্থক্যকারীরা তাঁদের পক্ষে যেসব দলিল পেশ করে থাকেন, এর একটিও সহিহ নয়। সবগুলোই দয়িফ। আর দলিলগুলোও তাঁদের দাবিকৃত সব ধরনের ভিন্নতা প্রমাণ করে না; বরং প্রতিটা দলিলে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতির বিবরণ এসেছে। তাই একটার মাধ্যমে আরেকটা শক্তিশালী হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। আমরা সেগুলোর বিস্তারিত তাহকিক ও পর্যালোচনা পেশ করছি।

সংশ্লিষ্ট হাদিস

ইমাম বাইহাকি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

قَدْ رُوِيَ فِيهِ حَدِيثَانِ ضَعِيفَانِ لَا يُحْتَجُّ بِأَمْثَالِهِمَا

‘এ বিষয়ে দুটো দয়িফ হাদিস রয়েছে। এগুলো দিয়ে প্রমাণ পেশ করা যায় না।’

তারপর তিনি হাদিসদুটো সনদসহ বর্ণনা করেছেন।

হাদিস নং : ১

তিনি বলেন,

أَحَدُهُمَا حَدِيثُ عَطَاءِ بْنِ الْعَجْلَانِ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ الْعَبْدِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، صَاحِبِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ الْأَوَّلُ، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ الصَّفُّ الْآخِرُ ” وَكَانَ ” يَأْمُرُ الرِّجَالَ أَنْ يَتَجَافَوْا فِي سُجُودِهِمْ، وَيَأْمُرُ النِّسَاءَ يَنْخَفِضْنَ  فِي سُجُودِهِنَّ، وَكَانَ يَأْمُرُ الرِّجَالَ أَنْ يَفْرِشُوا الْيُسْرَى، وَيَنْصِبُوا الْيُمْنَى فِي التَّشَهُّدِ، وَيَأْمُرُ النِّسَاءَ أَنْ يَتَرَبَّعْنَ وَقَالَ: ” يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ لَا تَرْفَعْنَ أَبْصَارَكُنَّ فِي صَلَاتِكُنَّ تَنْظُرْنَ إِلَى عَوْرَاتِ الرِّجَالِ ” أَخْبَرَنَاهُ أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، ثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ، ثنا الْعَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ بْنِ مَزْيَدٍ الْبَيْرُوتِيُّ، أنبأ مُحَمَّدُ بْنُ شُعَيْبٍ، أَخْبَرَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سُلَيْمٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ عَجْلَانَ أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ فَذَكَرَهُ وَاللَّفْظُ الْأَوَّلُ وَاللَّفْظُ الْآخِرُ مِنْ هَذَا الْحَدِيثِ مَشْهُورَانِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا بَيْنَهُمَا مُنْكَرٌ

‘প্রথম হাদিসটি আতা ইবনু আজলানের বর্ণিত। তিনি আবু নাদরাহ থেকে, আর তিনি সাহাবি আবু সায়িদ খুদরি থেকে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে,… রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের নির্দেশ দিতেন, তারা যেন সাজদাহতে অঙ্গগুলো পৃথক রাখে এবং মহিলাদের নির্দেশ দিতেন তারা যেন নিচু (জড়সড়) হয়ে থাকে। পুরুষকে বলতেন তাশাহহুদে বসে বাম পা যেন বিছিয়ে দেয় এবং ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখে। আর মহিলারা যেন পায়ের ওপর পা দিয়ে আড়াআড়িভাবে বসে…।’ এখানে অনুবাদকৃত এ অংশটুকুকে ইমাম বাইহাকি নিজেই ‘মুনকার’ বলেছেন।[৩]

হাদিস নং : ২

তারপর তিনি ২য় হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

وَالْآخَرُ: حَدِيثُ أَبِي مُطِيعٍ الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَلْخِيِّ، عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الْأُخْرَى، وَإِذَا سَجَدَتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِي فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا، وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ: يَا مَلَائِكَتِي أُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهَا

‘দ্বিতীয় হাদিস হলো আবু মুতি আল-বালখি বর্ণিত। তিনি উমার ইবনু যার থেকে, তিনি মুজাহিদ থেকে, আর তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহিলা যখন সালাতে বসবে, তখন যেন তার এক উরু অন্য উরুর ওপর রাখে। আর যখন সাজদায় যাবে, তখন তার পেট যেন উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে…।”’[৪]

হাদিসের মান : উল্লেখ্য, প্রথম হাদিসের সনদে আতা ইবনু আজলান আল-হানাফি এবং দ্বিতীয় হাদিসে আবু মুতি নামক দুজন বর্ণনাকারী রয়েছেন। তারা উভয়েই দয়িফ। জারহ-তাদিলের ইমামগণ আতা ইবনু আজলানের ব্যাপারে মাতরুক (পরিত্যাজ্য) ও কাযযাব (চরম মিথ্যাবাদী) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর দ্বিতীয় হাদিসের বর্ণনাকারী আবু মুতি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র। আবু মুতিকে প্রায় সকল মুহাদ্দিসই দয়িফ বলেছেন। ইমাম বুখারি পর্যন্ত তার ব্যাপারে দয়িফ ও সাহিবুর রাই (যুক্তিবাদী) বলেছেন। আসমাউর রিজালের বইগুলোতে এসব বিবরণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম বাইহাকিও হাদিসদুটো বর্ণনা করার পর এ দুজনের দয়িফ হাওয়ার বিষয়টি মুহাদ্দিস কিরামের উদ্বৃতিতে উল্লেখ করেছেন।[৫]

এসব জটিল সমস্যাযুক্ত বর্ণনাকারীর হাদিস কোনো বিধান সাব্যস্ত করবে দূরের কথা, অন্য সাধারণ-দয়িফ বর্ণনার সহায়ক হিসেবেও গ্রহণ করা যায় না। এ জন্য শুরুতেই ইমাম বাইহাকি রাহিমাহুল্লাহ বলেই দিয়েছিলেন, ‘এ বিষয়ে দুটো দয়িফ হাদিস রয়েছে। এগুলো দিয়ে প্রমাণ পেশ করা যায় না।’

ইমাম তাবারানি (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আল-মুজামুল কাবির’ গ্রন্থে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেছেন।

হাদিস নং : ৩

তিনি বলেন,

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْ حَضْرَمِيُّ قَالَ: حَدَّثَتْنِي مَيْمُونَةُ بِنْتُ حُجْرِ بْنِ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَتْ: سَمِعْتُ عَمَّتِي أُمَّ يَحْيَى بِنْتَ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، عَنْ أَبِيهَا عَبْدِ الْجَبَّارِ، عَنْ عَلْقَمَةَ عَمِّهَا، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: جِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ…. … فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا وَائِلُ بْنَ حُجْرٍ، إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ، وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا

‘আমাদের কাছে মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল্লাহ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমার কাছে মাইমুনা বিনতু হুজর বর্ণনা করেছেন যে, আমার ফুফু উম্মু ইয়াহইয়াকে বলতে শুনেছি, তিনি ওয়াইল ইবনু হুজর থেকে বর্ণনা করেছেন, ওয়াইল (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম…।… রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “হে ওয়াইল ইবনু হুজর, তুমি যখন সালাত পড়বে, তখন দুই হাত কান বরাবর নেবে। আর মহিলারা তাদের হাতদুটো স্তন বরাবর নেবে।”’[৬]

হাদিসের মান : এই হাদিসও দয়িফ। এর সনদে পরপর দুজন মাজহুল বর্ণনাকারী রয়েছেন, যাঁদের হাদিস-বর্ণনার ক্ষেত্রে ভালো ও মন্দ দিক উভয়টাই অজানা। তাঁরা হলেন, মাইমুনা বিনতু হুজর এবং তাঁর ফুফু উম্মু ইয়াহইয়া বিনতি আবদিল জাব্বার। ইমাম হাইসামিও তাঁদের ব্যাপারে একই কথা বলেছেন।[৭]

 

হাদিস নং : ৪

এ বিষয়ে আরও একটি হাদিস রয়েছে, যা ইমাম বাইহাকি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

أَخْبَرَنَاهُ أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ مُحَمَّدٍ أنبأ أَبُو الْحُسَيْنِ الْفَسَوِيُّ، ثنا أَبُو عَلِيٍّ اللُّؤْلُؤِيُّ، ثنا أَبُو دَاوُدَ، ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ، أنبأ ابْنُ وَهْبٍ، أنبأ حَيْوَةُ بْنُ شُرَيْحٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ غَيْلَانَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى امْرَأَتَيْنِ تُصَلِّيَانِ فَقَالَ: إِذَا سَجَدْتُمَا فَضُمَّا بَعْضَ اللَّحْمِ إِلَى الْأَرْضِ فَإِنَّ الْمَرْأَةَ لَيْسَتْ فِي ذَلِكَ كَالرَّجُلِ

‘…ইয়াযিদ ইবনু আবি হাবিব থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতরত দুজন মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করতে গিয়ে তাদের বললেন, “তোমরা যখন সাজদায় যাবে, তখন দেহের কিছু মাংস জমিনে লাগিয়ে রাখবে। কারণ, এ ক্ষেত্রে মহিলা পুরুষের মতো নয়।”’[৮]

হাদিসের মান : এই হাদিস মুরসাল দয়িফ। এতে দেখা যায়, বর্ণনাকারী ইয়াযিদ ইবনু আবি হাবিব সরাসরি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বর্ণনা করেছেন। অথচ তিনি সাহাবি নন, বরং তাবিয়ি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি হাদিস শোনা তাঁর জন্য অসম্ভব। তাই হাদিসশাস্ত্রের উসুল অনুযায়ী এটা মুরসাল হওয়ায় গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। অনেকে মুরসালের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে নিজের মতো উসুল টেনে আনেন। অথচ শাস্ত্রীয় বিষয়ে শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামতই গ্রহণ করতে হয়। মুরসাল হাদিসশাস্ত্র-সংশ্লিষ্ট বিষয়। তাই এ বিষয়ে মুহাদ্দিস কিরামের মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তাঁরাসহ জুমহুরের (অধিকাংশ) মতে মুরসাল দয়িফের একটি প্রকার। সেটা প্রমাণের জন্য উপযুক্ত নয়। অবশ্য ইমাম শাফিয়ি (রাহিমাহুল্লাহ) কিছু শর্তের ভিত্তিতে মুরসালকে গ্রহণ করার মত দিয়েছেন। ইমাম নাওয়াবি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

قَالَ الشَّافِعِيُّ رَحِمَهُ اللَّهُ وَأَحْتَجُّ بِمُرْسَلِ كِبَارِ التَّابِعِينَ إذَا أُسْنِدَ مِنْ جِهَةٍ أُخْرَى أَوْ أَرْسَلَهُ مَنْ أَخَذَ عَنْ غَيْرِ رِجَالِ الْأَوَّلِ مِمَّنْ يُقْبَلُ عَنْهُ الْعِلْمُ أَوْ وَافَقَ قَوْلَ بَعْضِ الصحابة أَوْ أَفْتَى أَكْثَرُ الْعُلَمَاءِ بِمُقْتَضَاهُ قَالَ وَلَا أَقْبَلُ مُرْسَلَ غَيْرِ كِبَارِ التَّابِعِينَ وَلَا مُرْسَلَهُمْ إلَّا بِالشَّرْطِ الَّذِي وَصَفْتُهُ

‘শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমি কিবারুত তাবিয়িনের (প্রথম সারির তাবিয়ি) মুরসাল দ্বারা দলিলগ্রহণ করি। শর্ত হলো, যদি সেটা অন্য সূত্রে মুসনাদ (সনদের ধারাবাহিকতা) থাকে; অথবা মুরসাল হিসেবেই এমন ব্যক্তি থেকে ভিন্ন সূত্রে বর্ণিত থাকে, যাদের থেকে ইলম নেয়া যায়; অথবা মুরসালটা কিছু সাহাবির বক্তব্যের অনুকূলে হয়; কিংবা মুরসাল হাদিসটির দাবি অনুসারে অধিকাংশ আলিমের ফাতওয়া থাকে।” তিনি আরও বলেছেন, “আমি কিবারুত তাবিয়িন ছাড়া অন্যদের মুরসাল গ্রহণ করি না। আর বর্ণিত শর্তগুলো পাওয়া না-গেলে আমি তো তাঁদের মুরসালও গ্রহণ করি না।’[৯]

আমাদের বক্তব্য ছিল জুমহুরের মতে মুরসাল শর্তহীনভাবে পরিত্যাজ্য। কিন্তু যারা এ ধরনের একটা দয়িফ হাদিসকে দলিল হিসেবে পেশ করার জন্য শর্তের আলোচনা টেনে আনেন, তাদের জন্য বোঝা আবশ্যক যে, যে সকল মুহাদ্দিস শর্তের ভিত্তিতে মুরসাল গ্রহণ করেন, তাঁদের শর্তগুলো উল্লিখিত হাদিসে পাওয়া যায় কি না।

ইমাম শাফিয়ি (রাহিমাহুল্লাহ) যেসব শর্ত দিয়েছেন, তাঁর মতে সে শর্তগুলো কিবারুত তাবিয়ির বর্ণিত মুরসালে হতে হবে। তিনি স্পষ্টভাবে বলছেন, কিবারুত তাবিয়ি ছাড়া অন্য কারও মুরসালে সেসব শর্ত দেখা হবে না। কারণ অন্যদের মুরসাল গ্রহণযোগ্যই নয়। এই বিচারে উল্লিখিত মুরসাল হাদিসটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যা দ্বারা দলিলগ্রহণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, হাদিসটা যিনি ইরসাল করেছেন—ইয়াযিদ ইবনু আবি হাবিব—তিনি সিগারুত তাবিয়ি (শেষ প্রজন্মের তাবিয়ি)। তাঁর জন্ম ৫৩ হিজরিতে এবং মৃত্যু ১২৮ হিজরিতে। মুহাদ্দিস কিরাম তাঁকে সিগারুত তাবিয়ির অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন।

তাই ইমাম শাফিয়ির শর্ত মতেও তাঁর মুরসাল গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইমাম শাফিয়ি শেষোক্ত যে শর্ত দিয়েছেন যে, মুরসালের অনুকূলে অধিকাংশ আলিমের ফাতওয়া থাকতে হবে, সেটা ইমাম শাফিয়ির পরবর্তী যুগের আলিমদের ফাতওয়া নয়; বরং তাঁর আগের যুগের আলিমদের, অর্থাৎ অধিকাংশ তাবিয়ির ফাতওয়া উদ্দেশ্য। কারণ, তিনি যাদের ফাতওয়া গ্রহণ করবেন, তাঁদের তো অবশ্যই তাঁর আগে থাকতে হবে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, যেহেতু ইমাম শাফিয়ির মতে মুরসাল হাদিসের অনুকূলে সাহাবিদের বক্তব্য থাকতে হবে, তাই পার্থক্যকারীরা উল্লিখিত হাদিসের সমর্থনে কয়েকজন সাহাবির বক্তব্যও পেশ করে থাকেন। যাতে সব মিলে একটা বিধান সাব্যস্ত হয়ে যায়। অথচ ইমামের বক্তব্য ছিল শর্তগুলো তখনই দেখা হবে, যখন মুরসালটা কিবারুত তাবিয়ির বর্ণিত হবে। এই শর্তের কারণে অন্যান্য সাহাবির বক্তব্য বর্ণিত থাকলেও হাদিসটা সহিহ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সাহাবিদের যে কয়টা বক্তব্য তাঁরা পেশ করে থাকেন, সবগুলোই দয়িফ; একটাও সহিহ নয়।

সাহাবিদের বক্তব্য

সাহাবিদের বক্তব্যগুলো আমরা উল্লেখ করছি :

আসার নং : ১

عَنِ الْحَارِثِ، عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: إِذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَحْتَفِزْ، وَلْتُلْصِقْ فَخِذَيْهَا بِبَطْنِهَا

‘হারিস থেকে বর্ণিত, আলি (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেন, মহিলা যখন সাজদায় যাবে, তখন যেন হাঁটুর সাথে হাঁটু এবং পেটের সাথে উরু লাগিয়ে রাখে।’[১০]

মান : এটা দয়িফ বর্ণনা। কারণ, আলি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনাকারী হারিস দয়িফ।

আসার নং : ২

عن بكير بن عبد اللَّه بن الأشج عن ابن عباس: أنه سئل عن صلاة المرأة، فقال: تجتمع و تحتفز

‘বুকাইর থেকে বর্ণিত, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁকে মহিলার সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মিলিত হয়ে থাকবে এবং হাটুর সাথে হাটু লাগিয়ে রাখবে।’[১১]

মান : এটাও দয়িফ। কারণ, বুকাইর আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেনি। সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।

আসার নং : ৩

ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ বর্ণনা করেছেন,

حدثنا أبو بكر قال: نا أبو خالد عن محمد بن عجلان عن نافع: أن صفية كانت تصلي وهي متربعة

‘মুহাম্মাদ ইবনু আজলান থেকে বর্ণিত, তিনি নাফি থেকে বর্ণনা করেছেন, সফিয়াহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) সালাতে পায়ের ওপর পা দিয়ে আড়াআড়িভাবে বসতেন।’[১২]

 

মান : এই আসারও (বর্ণনা) দয়িফ। কারণ, নাফি থেকে বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু আজলান মুযতারিব রাবি। হাদিসশাস্ত্রের বিখ্যাত ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সায়িদ আল-কাত্তান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

كَانَ ابْنُ عَجْلاَنَ مُضْطَرِبَ  الحَدِيْثِ فِي حَدِيْثِ نَافِعٍ

‘ইবনু আজলান নাফি থেকে হাদিস বর্ণনার বেলায় মুযতারিবুল হাদিস।’[১৩]

ইমাম উকাইলি (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন,

قِيلَ لِمَالِكِ بْنِ أَنَسٍ: إِنَّ نَاسًا مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ يُحَدِّثُونَ، فَقَالَ مَنْ هُمْ؟ فَقِيلَ لَهُ: مُحَمَّدُ بْنُ عَجْلَانَ، فَقَالَ: لَمْ يَكُنْ يَعْرِفُ ابْنُ عَجْلَانَ هَذِهِ الْأَشْيَاءَ، وَلَمْ يَكُنْ عَالِمًا

‘ইমাম মালিককে বলা হলো, কিছু আহলুল ইলম হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কারা? বলা হলো, মুহাম্মাদ ইবনু আজলান। তখন তিনি বললেন, ইবনু আজলান এসব বিষয় জানে না (জ্ঞান রাখে না), আর সে আলিমও নয়।'[১৪]

আসার নং : ৪

ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ আরেকটি আসার বর্ণনা করেছেন,

حدثنا أبو بكر قال: نا وكيع عن العمري عن نافع قال: كن نساء ابن عمر يتربعن في  الصلاة

‘উমারি থেকে বর্ণিত, তিনি নাফি থেকে বর্ণনা করেছেন, ইবনু উমারের স্ত্রীগণ সালাতে পায়ের উপর পা দিয়ে আড়াআড়িভাবে বসতেন।’[১৫]

 

মান : এটাও দয়িফ। কারণ, নাফি থেকে বর্ণনাকারী উমারি দয়িফ রাবি।

শেষ কথা

 

সত্য হচ্ছে, সাহাবা কিরামের সাথে সম্পৃক্ত এসব দয়িফ বক্তব্য ও আমল পূর্বোল্লিখিত মুরসাল হাদিসকে শক্তিশালী করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ, প্রথমত, সবগুলো আসারই দয়িফ, যা গ্রহণ করার মতো নয়। দ্বিতীয়ত, মুরসাল হাদিসটা সিগারুত তাবিয়ির বর্ণিত, যা ইমাম শাফিয়ির মতে সাহাবিদের বক্তব্য দিয়েও শক্তিশালী করার পথ নেই। তৃতীয়ত, মুরসাল হাদিসে শুধু সাজদাহর বিবরণ রয়েছে, সালাতের অন্যান্য বিষয়ে পুরুষের ব্যতিক্রম আমলের কোনো বিবরণ নেই। তাই, এটা দিয়ে নারী-পুরুষের সালাতের সব রুকনে পার্থক্যের দাবি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয় না।

  • ১নং হাদিস মুনকার ও পরিত্যাজ্য হওয়ায় অন্য বর্ণনা দিয়ে এটা শক্তিশালী হবে না।
  • ২নং হাদিসে সাজদাহ ও বসার বিবরণ বর্ণিত হয়েছে।
  • ৩নং হাদিসে হাত উত্তোলনের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে।
  • ৪নং হাদিস তো মুরসালই। এটি শর্তসাপেক্ষেও গ্রহণযোগ্য নয়।

দেখা যায়, প্রতিটা হাদিসে মহিলাদের সালাতের ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের উসুল অনুযায়ী একই বিষয়ে একাধিক দয়িফ হাদিস বর্ণিত থাকলে একটার মাধ্যমে আরেকটা শক্তিশালী হয়ে মোটামুটি প্রমাণের উপযুক্ত হয়, যাকে হাসান লি-গাইরিহি বলে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এই হাদিসগুলোর প্রতিটাই ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ-সংবলিত। সবগুলো হাদিস একই বিবরণ দিচ্ছে না। আর সবগুলোই দয়িফ হওয়ার কারণে হাসান-স্তরে পৌঁছাও সম্ভব নয়; দয়িফই থেকে যায়। উপরন্তু হাদিসগুলোতে মাত্র কয়েকটি বিষয়ের বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। অথচ নারী-পুরুষের সালাতে পার্থক্যকারীগণ এগুলোর ওপর ভিত্তি করে পুরো সালাতেই মহিলাদের ভিন্ন পদ্ধতির ফাতওয়া দেন। আশ্চর্যজনক!

আর ৪নং হাদিস যেহেতু এমন মুরসাল, যা শর্তসাপেক্ষেও গ্রহণযোগ্য নয়, তাই এটা যেমন অন্যগুলোকে শক্তিশালী করার ক্ষমতা রাখে না, তেমনি সাহাবিদের সকল দয়িফ আসার (বর্ণনা) মিলেও একে শক্তিশালী করবে না। হাঁ, পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ মহিলাদের বসার ভিন্ন পদ্ধতির কথা বলে গিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ তাঁদের নিজস্ব মতামত ছিল, যা কোনো সহিহ হাদিসের ভিত্তিতে ছিল না। আর তাঁরা নিজেদের মতের পক্ষে কোনো সহিহ দলিলও পেশ করেননি। এ ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ দলিলপ্রমাণের আলোকে এটিই সুস্পষ্ট যে, নারী-পুরুষের সালাতে পদ্ধতিগত কোনো পার্থক্য নেই।

________________________

তথ্যসূত্র

[১] সহিহ বুখারি : ৬৩১

[২] সহিহ বুখারি, অধ্যায় : আযান, পরিচ্ছেদ : তাশাহহুদে বসার পদ্ধতি

[৩] আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস নং : ৩১৯৮

[৪] প্রাগুক্ত, হাদিস নং : ৩১৯৯-৩২০০

[৫] প্রাগুক্ত, বর্ণনা নং : ৩২০০

[৬] ইমাম তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির, হাদিস নং : ২৮

[৭] দেখুন : ইমাম হাইসামি, মাজমায়ুয যাওয়ায়িদ, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১০৩, হাদিস নং : ২৫৯৪; ইমাম আলবানি, সিলসিলাতুদ দয়িফাহ, হাদিস নং : ৫৫০০

[৮] আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস নং : ৩২০১

[৯] ইমাম নাওয়াবি, আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬১

[১০] মুসান্নাফু আবদির রাযযাক, হাদিস নং : ৫০৭২;  মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবাহ : ২৭০৩; ইবনু আবি শাইবাহর বর্ণনায় এভাবে আছে, ‘মহিলা যেন দুই হাঁটু ও দুই উরু মিলিত করে রাখে।’

[১১] মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবাহ, হাদিস নং : ২৭০৪

[১২] মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবাহ, হাদিস নং : ২৮১০

[১৩] ইমাম যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবি নং : ১৩৫; ইমাম উকাইলি, আদ-দুয়াফা, রাবি নং : ১৬৭৭

[১৪] প্রাগুক্ত

[১৫] প্রাগুক্ত, হাদিস নং : ২৮১৫