প্রবৃত্তি ও নফস মানবজাতির জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। মানবজাতি কখনোই এর বাইরে থাকতে পারে না এবং সে তার প্রবৃত্তিমুক্ত হতে পারে না। আল্লাহ মানবজাতিকে নফস দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। মানুষ মানেই তার মাঝে প্রবৃত্তি থাকবে, নফস থাকবে এবং চাহিদা থাকবে। এটি মানবজাতির জন্য কোনো দোষণীয় বিষয় নয়। মানবজাতিকে শুধু তার নফস বা প্রবৃত্তির ওপর কখনোই শাস্তি দেওয়া হবে না। মানুষ যখন কোনোকিছু চায় বা পছন্দ করে, তা তার জন্য কোনো অপরাধ নয় যে, তাকে এ কারণে তার ওপর শাস্তি দিতে হবে। তবে কখন মানুষকে তার প্রবৃত্তির কারণে শাস্তি দেয়া হবে, এটি একটি যুগান্তকারী প্রশ্ন। এ ছাড়াও আরেকটি প্রশ্ন হলো, একজন মানুষ তার অন্তর বা আত্মা থেকে প্রবৃত্তি বা নফসের চাহিদাকে একেবারে সম্পূর্ণভাবে বের করে দিতে বা তা ফেলে দিতে নির্দেশিত কি না, না কি তার জন্য কিছু নিয়ম বা কায়দা-কানুন আছে?
এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং সমাধানের বিষয়। যুগে যুগে মানুষের মাঝে এ ধরনের প্রশ্ন বিভিন্নভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং বার বার তা মানুষের সামনে উঠে আসছে। ইসলামের বড় বড় মনীষীরাও যুগ যুগ ধরে এসব প্রশ্নের যথার্থ সমাধান দিয়েছেন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মানবজাতিকে শুধু তার নফস বা প্রবৃত্তির ওপর ভিত্তি করে কখনোই শাস্তি দেয়া হবে না; তাকে শাস্তি দেওয়া হবে প্রবৃত্তি ও নফসের অনুকরণ ও অনুসরণ করার ওপর। যখন মানবাত্মা কোনোকিছুর আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু সে তা না-করে মানবাত্মাকে তা থেকে বিরত রাখে, তবে তাকে কোনো প্রকার শাস্তি পেতে হবে না, বরং তার জন্য এ বিরত থাকা আল্লাহর ইবাদত ও ইসলামি শরিয়াতের নেক-আমল বলে পরিগণিত হবে ।
এ হলো একজন সত্যিকার মুসলিমের অবস্থা। সবসময় তার নফস তাকে বিভিন্ন খারাপ কাজের নির্দেশ দিতে থাকে। আর সে তার নফসের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে এবং নফসের নির্দেশ অমান্য ও বিরোধিতা করে আল্লাহকে ভয় করতে থাকে। যার মাঝে এ ধরনের গুণ পাওয়া যাবে, সে ব্যক্তিই সত্যিকারের ইমানদার ও প্রকৃত মুমিন। আর এ ধরনের ইমানদারের জন্য রয়েছে জান্নাত ও উত্তম প্রতিদান।
আল্লাহ বলেন,
وَأَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ وَنَهَى ٱلنَّفۡسَ عَنِ ٱلۡهَوَىٰ ٤٠ فَإِنَّ ٱلۡجَنَّةَ هِيَ ٱلۡمَأۡوَىٰ
‘আর যে নিজ রবের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজকে বিরত রাখে, নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল।’ [সুরা আন-নাজিয়াত, ৭৯ : ৪০-৪১]
আয়াতে আল্লাহ দুটো জিনিস স্পষ্ট করেন :
এক. যারা নিজ প্রবৃত্তির অবস্থান অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করে। শুধু ভয় করা যথেষ্ট নয়, বরং আল্লাহকে ভয় করতে হবে তাঁর শান ও অবস্থান হিসেবে।
দুই. এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে তাকে বিরত থাকতে হবে; মনে যা চায় তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের নফস বা নফসের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হতে হবে। তখন তার জন্য আল্লাহর ঘোষণা হলো জান্নাতই হবে তার আবাসস্থল।
মোটকথা, প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী আমল করা ছাড়া কাউকে কোনো প্রকার শাস্তি দেওয়া হবে না। মানুষ যখন কোনো গুনাহ করার ইচ্ছা করে বা তার গুনাহ করতে মনে চায়, কেবল এর ওপর তাকে কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না। তবে লোকটি তার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা অনুযায়ী আমল করলে তাকে তার আমল ও প্রবৃত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
____________
[ সংগ্রহসূত্র : ইসলামহাউজ ]