মানুষ সৃষ্টির হিকমাত

প্রশ্ন : আমি অমুসলিম। আমি জানতে চাই, ‘আল্লাহ কেন মানুষ সৃষ্টি করেছেন’ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কি?

উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহই মানুষের স্রষ্টা, তিনি একাই সকল মাখলুক সৃষ্টি করেছেন। যেমন চতুষ্পদ জন্তু, পাখি, কীটপতঙ্গ, মাছ ও অন্যান্য মাখলুক, হোক সে মানুষ কিংবা জিন। আমরা আরও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাদেরকে অযথা সৃষ্টি করেননি। তিনি বলেন,

وَمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَيۡنَهُمَا لَٰعِبِينَ ٣٨ مَا خَلَقۡنَٰهُمَآ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ

‘আর আমি আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এ দুটোকে যথাযথই সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।’ [সুরা আদ-দুখান, ৪৪ : ৩৮-৩৯]

আল্লাহ মানবজাতিকে সকল মাখলুকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, তিনি তাদের দান করেছেন বিবেক, শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, অন্তর এবং মুখকে দিয়েছেন বাক্‌শক্তি। তিনি মানুষকে সবার ওপর মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন,

وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا

‘আর আমি তো আদম-সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং দিয়েছি উত্তম রিযক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের ওপর তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি।’ [সুরা আল-ইসরা, ১৭ : ৭০]

আল্লাহ মানুষকে বিবেক ও অন্তর দান করেছেন। মানুষ তার স্রষ্টাকে জানে, তাই তাকে ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষ আল্লাহর মালিকানাধীন, মালিকানাধীন বস্তুতে কর্তৃত্ব করা মালিকের অধিকার, তাই তাদের তিনি ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন, বরং ইবাদতের জন্যই তাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন,

وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ

‘আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা কেবল আমার ইবাদত করবে।’ [সুরা আয-যারিয়াত, ৫১ : ৫৬]

 তিনি তাদেরকে অন্যান্য জীবজন্তুর মতো হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ

‘তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদের কেবল অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে না?’ [সুরা আল-মুমিনুন, ২৩ : ১১৫]

 এটা খারাপ ধারণা। অন্যত্র তিনি বলেন,

أَيَحۡسَبُ ٱلۡإِنسَٰنُ أَن يُتۡرَكَ سُدًى

‘মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেওয়া হবে?’ [ সুরা আল-কিয়ামাহ, ৭৫ : ৩৬]

অর্থাৎ অযথা তাকে নির্দেশ ও নিষেধ করা হবে না এবং তাকে কোনো বিধান দেওয়া হবে না। আল্লাহ মানবজাতিকে অন্যান্য মাখলুক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। তাই তিনি তাদের ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন, হারাম বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন, আনুগত্যের বিনিময়ে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। তিনি তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, মৃত্যুর পর তাকে পুনরায় উত্থিত করবেন, তারপর সে তার পরিপূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। এ সংবাদ যে বিশ্বাস করল সে মুমিন, যে প্রত্যাখ্যান করল সে কাফির। কাফির নিজেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। আল্লাহই ভালো জানেন।

___________

ফাতওয়াদাতা : শাইখ আবদুল্লাহ ইবনু জিবরিন (রাহিমাহুল্লাহ)

[সংগ্রহসূত্র : ইসলামহাউজ, মাওকিউল ইসলামি সাওয়ালু ওয়া জাওয়াব]