ইমাম মালিক কি শাওয়ালের ছয় সাওমকে মাকরুহ মনে করতেন? 

শাইখ হাসান আল-কাত্তানি 

আবু আইয়ুব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  

من صام رمضان وأتبعه ستا من شوال كان كصيام الدهر 

‘যে ব্যক্তি রমাদানের সাওম রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওম রাখল, সে যেন পুরো বছর সাওম রাখল।’ [সহিহ মুসলিম, সুনানু আবি দাউদ, সুনানুত তিরমিযি, সুনানুন নাসায়ি, সুনানু ইবনি মাজাহ; সহিহ] 

হাদিসটি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসের ভিত্তিতে ইমাম নাওয়াবি ও ইমাম ইবনু কুদামাহ বলেছেন, অধিকাংশ উলামা কিরাম শাওয়াল মাসে ছয় দিন সিয়াম রাখার ব্যাপারে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করেছেন। 

হাঁ, ‘আল-মুয়াত্তা’য় ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আল-লাইসির একটি বর্ণনার কারণে কখনো কখনো দাবি করা হয় যে, ইমাম মালিক শাওয়াল মাসের ছয় সাওমকে মাকরুহ মনে করতেন এবং এতে নিরুৎসাহিত করতেন। ইয়াহইয়া বলেন, তিনি ইমাম মালিককে বলতে শুনেছেন¾সালাফদের কেউ এমন করতেন বলে আমি শুনিনি আর আলিমগণ একে প্রত্যাখ্যান করেন। 

ইমাম মালি সাধারণ মুসলিমদের বিদআতে পড়ার আশঙ্কা করেছিলে 

ইমাম মালিক শাওয়ালের ছয় দিন সাওম রাখাকে অপছন্দ করতেন—এই উপসংহার টানার আগে ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আল-লাইসি বর্ণিত বর্ণনাটির সম্পূর্ণ বক্তব্য লক্ষ করা প্রয়োজন, ‘সালাফদের কেউ এমন করতেন বলে আমি শুনিনি এবং আলিমগণ একে প্রত্যাখ্যান করেন। মানুষ যদি দেখে উলামা কিরাম এর অনুমতি দিয়েছেন এবং নিজেরা পালন করেছেন, তবে তাঁরা ভয় করেন যে, এটি একসময় বিদআতে রূপ নেবে আর সাধারণ ও অজ্ঞরা একে রমাদান মাসের সাওমের সাথে মিলিয়ে দেবে।’ 

এ থেকে বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট, ইমাম মালিক এ জন্যই এটি অপছন্দ ও ভয় করতেন যে, সাধারণ মুসলিমরা এই ছয় সাওমকে রমাদান মাসের ফরযের মতো মনে করতে পারে। 

মালিকি উলামা কিরাম ই ব্যাপারে ইমাম মালিকে অবস্থানকে স্পষ্ট করেছেন 

ইমাম মালিকের অবস্থান বুঝতে হলে আমাদেরকে ইমাম মালিকের ফিকহের অনুসরণ করা প্রখ্যাত উলামা কিরামদের কাছে ফিরে যেতে হবে। ‘আল-মুয়াত্তা’র সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আত-তামহিদ’-এ ইমাম ইবনু আবদিল বার আল-আন্দালুসি আল-মালিকি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদিসটি ইমাম মালিক শুনেননি এমনটা হতে পারে না। এ তো মদিনায় বর্ণিত হওয়া হাদিস। এরপর তিনি ব্যাখ্যা করেন,  ইমাম মালিক এই ব্যাপারে ভয় করতেন যে, সেখানকার লোকেরা এই নফল আমলকে ফরযের মতো মনে করতে পারে। যার কারণে তিনি জনসাধারণের সামনে এমন কিছু কিছু আমল করা থেকে বিরত থাকতেন, যা দেখে তারা ভুল বুঝতে পারে। 

মালিকি মাযহাবের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফিকহগ্রন্থ ‘মুখতাসার আল-খলিল’-এ এই ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে। আল -হাত্তাব, আদ-দামিরি, আদ-দারদির, আদ-দাসুকসহ আরও উলামা কিরাম ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই সাওম তখনই অপছন্দনীয় হবে যখন—  

১. একজন সুপরিচিত আলিম 

২. জনসাধারণের সামনে 

৩. সরাসরি ঈদের পর 

৪. ধারাবাহিক ভাবে 

এই সিয়ামগুলো রাখবেন। যেকোনো একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকলে এটি অপছন্দনীয় নয় বরং অনুসরণীয় হিসেবে গণ্য করা হবে। এখানে গ্রেনাডার সর্বশেষ আলিম হিসেবে স্বীকৃত ইমাম আল-মাওয়াক পার্শ্বটীকা হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর উসতায শাইখুশ শুয়ুখ ইবনু লুব, ইমাম আল-হাফফারসহ আরও কয়েকজন থেকে বর্ণনা করেন যে, আদেশ ও নিষেধের ক্ষেত্রে আমরা মালিকি, কিন্তু পছন্দনীয়-অপছন্দনীয় বিষয়ে আমরা আহলুল হাদিসকে অনুসরণ করে থাকি। যেহেতু শাওয়ালের সিয়াম দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে, তাই তাঁরা আহলুল হাদিস উলামা কিরামের অনুসরণ করতেন। 

ইমাম মালি নিজেই শাওয়ালের ছয় দিন সিয়াম রাখতেন 

মুতাররিফ বর্ণনা করেন, ইমাম মালিক নিজেই শাওয়াল মাসে ছয় দিন সিয়াম রাখতেন। তিনি গোপনে রাখতেন। কারণ, ওপরের ব্যাখ্যা অনুসারে এই সিয়ামকে এমনভাবে মাকরুহ মনে করতেন যে, সাধারণ মানুষ একে রমাদানের সিয়ামের মতো ফরয মনে করতে পারে কিংবা রমাদানের সাথে মিলিয়ে ফেলে বিদআতে লিপ্ত হতে পারে। 

ভালো আমল করুন, নিজেকে এর মহান পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করবেন না 

পরিশেষে, আমি আপনাদের শাওয়াল মাসে ছয় দিন সিয়াম রাখার ব্যাপারে জোরালো উৎসাহ দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর অনুসরণ করুন। যেহেতু আমরা সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হতে চাই না, তাই ভালো আমল থেকে বিরত থাকার কোনো কারণই নেই। 

আর আল্লাহই ভালো জানেন। 

_______________ 

ভাষান্তর ও সম্পাদনা : অনুবাদ ও পর্ষদ 

[ সূত্র : ইবনু আবদিল বার ডট কম ]