মূল : শাইখা উম্মু মুসা
ভাষান্তর : ডা. সাবরিনা নওরিন
শাইখ মুসা আবদুল্লাহ জিবরিল এক গৌরবদীপ্ত ও অনুপ্রেরণামূলক জীবনের আলেখ্য। বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধিৎসা, অটল ইমান, উপকারী ইলমের প্রতি আত্মত্যাগ ও সমাজসেবায় তিনি জীবনময় সদর্পে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।[১] ফিলিস্তিনের বিক্ষুব্ধ নগরী ও দুঃসহ অবৈধ দখলদারিত্বের অধীন হাইফার বুকে তাঁর জন্ম। কেবল বিশুদ্ধ তাওহিদ ও আকিদাহর প্রসারে তার অভিজ্ঞতাকে নিরলস সংগ্রামে পরিণত করার অপরাধে শাইখ জিবরিল শেষ জীবনে এসে দুর্দশা-কষ্ট বরণ করেন।
জীবনের প্রাথমিক বছরগুলো পরিণত হয় দামেশকে (সিরিয়া) যাবার মধ্য দিয়ে। তারপর সেখান থেকে জর্দান। বিশের শেষ কোঠায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার স্মরণীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আগপর্যন্ত সেখানেই তাঁর তরুণ বয়স কাটে। কৈশোরজুড়ে ইলমের প্রতি শাইখের ছিল অদম্য স্পৃহা। বইপত্র ছিল নিত্যসঙ্গী। এখানে এসে তিনি ব্যাপক অজ্ঞতা লক্ষ করেন। বিশুদ্ধ তাওহিদের পুরোদস্তুর অভাব। আর তারপরই যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম সালাফি দাওয়াহ (সালাফদের আকিদাহ ও মানহাজের দিকে আহ্বান) প্রচারে তাঁর আজীবন পথচলার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে গেল। ইসলামি দাওয়াহর চর্চা শুরু হয়ে গেল। রেওয়াজ শুরু হয়ে যায় ইসলামে দীক্ষিত করার।
ইমানের বুঝ ও ব্যাখ্যাকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে শাইখ জিবরিল বিখ্যাত মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। আকিদাহ ও শরিয়াহতে বিশেষজ্ঞ হন। প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়নে একাগ্রতার ফলে তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টিসহ স্নাতক সম্পন্ন করেন। এটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করার তৃষ্ণাসহ তাঁর চলমান দাওয়াহকে আরও বেগবান করে তোলে।[২]
মদিনার পর্বতমালায় বহু সম্মানিত আলিমের অধীনে শাইখ জিবরিলের অধ্যয়নের সুযোগ হয়েছিল। সেই সূত্রধরে তাঁদের সাথে তাঁর দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দাওয়াহর জগতে তাঁর নেতৃর্ত্বপূর্ণ সফরে এটি তাঁকে সীমাহীন উৎসাহ-উদ্দীপনা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। তাঁর মাশাইখরা তাঁকে অত্যন্ত সম্মান ও স্নেহের সাথে আগলে রাখতেন। অসংখ্য মাশাইখের সান্নিধ্যে তিনি শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁরা তাঁকে গুরুত্ব দিতেন। নির্ভেজাল তাওহিদ প্রসারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, এই ছিল তাঁদের স্বপ্ন। মসজিদে নববিতে উসতায ও মুদাররিসদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পড়ার সুবিধা ছিল তাঁর। যেখানেই যেতেন, সমাদৃত হতেন। জীবনভর দাওয়াহর প্রতি তাঁর এই অঙ্গীকার ছিল শুধু আল্লাহরই জন্য। এ জন্য তিনি কোনো বিনিময় বা দান-সাদাকাহ গ্রহণ করেননি। ছিলেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগসূত্র স্থাপনের অগ্রদূত। তাঁর স্বতন্ত্র ভূমিকায় সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বইপত্র বয়ে আনা হতো। লক্ষ্য ছিল দাওয়াহর কাজসহ মানুষদের শিক্ষিত করা।
অসংখ্য সহপাঠী, বন্ধু ও উলামা কিরামের সাথে তাঁর যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা সত্যিই ব্যতিক্রম।[৩] তিনি যে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী, এটি সেই প্রমাণিত সত্যেরই প্রতিফলন। আর তাঁর প্রচুর ইলমেরও সাক্ষ্য। বিশ্বজুড়ে নন্দিত হবার অসংখ্য সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শাইখ তাওহিদের বিশুদ্ধ নীতির ওপর অবিচলভাবে নিবেদিত থেকেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অপ্রতিহত। পার্থিব স্বীকৃতির পরিবর্তে বরং মালাকদের মাঝে পরিচিত হওয়াকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।
বিনয় ও নম্রতাপূর্ণ চালচলন সত্ত্বেও যে বিশিষ্ট গুণের জন্য শাইখ গভীর ইলম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা হলো সময়ের ব্যবহারে তার নিরলস অঙ্গীকার। তিনি জীবনের এক মুহূর্তও নষ্ট করেননি। ইলমের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন। কেবল ক্লাসরুমের মাঝেই সেটি সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তাঁর সত্তাজুড়ে এক ধরনের স্বচালিত উদ্যম ও স্পৃহা অনুভব করতেন। তা এতটাই তীব্র ছিল যে, বিয়ের পর তাঁর স্ত্রী (রাহিমাহাল্লাহ)[৪] বলতেন, তিনি কি তাকে বিয়ে করেছেন না কি তাঁর বইপত্রকে? এমনকি তিনি তাঁর আঙুলের কথাও স্মরণ করতেন যে, কীভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায়ও সেগুলো লেখার ভঙ্গিমায় আন্দোলিত হতো! সারাটা জীবন কীভাবে তিনি ইলমের সাথে একাত্ম হয়ে ছিলেন, এ থেকেই বোঝা যায়।
শাইখের সুখ্যাতির পেছনে তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি যেহেতু ভ্রষ্ট আকিদাহর বিরুদ্ধ্বে মিশনে নেমেছিলেন, তাই এখানকার আলিমদের থেকে তাঁকে অনেক বড় বড় বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। তা সত্ত্বেও মদিনা ও যুক্তরাষ্ট্রে তিনি খুব দ্রুত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। আশারি, সুফি ও শিয়াদের ভ্রান্তির মাঝে শাইখ বিশুদ্ধ ইসলামি দাওয়াহ নিয়ে আগমন করেন। যখনই নতুনরা আসতো, শাইখের শিক্ষকরা তাদেরকে তাঁর কথা বলে দিতেন। [৫]
উদাহরণস্বরুপ, শাইখ শানকিতির (আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন) চোখের মণি শাইখ আতিয়াহ আস-সালিমের হালাকায় শাইখ মুসা পাশের আসনেই বসতেন। মাঝেমধ্যে শাইখ আতিয়াহর আগে চলে যাবার দরকার হলে তিনি আস্থার সাথে শাইখ মুসার ওপর ক্লাসের ভার ছেড়ে দিতেন। কিছু জানার থাকলে ছাত্রদের এই বলে নির্দেশ দিয়ে যান যে, ‘শাইখকে জিজ্ঞেস কোরো।’ যুবক বয়স থেকে শাইখ মুসার প্রতি এমন আস্থা ও সম্মান, নানা ব্যক্তিগত বিষয়ে তাঁর কাছে দায়িত্ব অর্পণ, দারসের (ক্লাস) দায়িত্বশীল হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করা এসবই তাঁর বিশ্বস্ততা ও সততার প্রমাণ বহন করে। উপরন্তু শাইখ মুসা বহু ছাত্রকে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছে তিনি এতটাই সমীহের পাত্র ছিলেন যে, যেকোনো সমস্যাসমাধান ও সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজনে সবাই তাঁর কাছে ছুটে যেত।
যুক্তরাষ্ট্রে শাইখের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনার বিষয় ছিল সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞান। মদিনাতে তিনি কুরআন, অসংখ্য হাদিসের বই, মতন (মূল পাঠ) ও ব্যাখ্যা মুখস্থ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। এখন পর্যন্ত শাইখের যেসব স্বীকৃত গুণ রয়েছে, তার অন্যতম হলো বিস্ময়কর স্মরণশক্তি। চরিত্রগঠনে তাঁর সম্মানিত বাবা আবদুল্লাহ মুসা জিবরিলেরও প্রভাব রয়েছে। তাঁর বাবা ছিলেন সমাজের অত্যন্ত গণ্যমান্য ব্যক্তি। দৃঢ়চেতা ও অত্যন্ত দ্বীনদার মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার মূখ্য ভূমিকা ছিল। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টায় তিনি অসংখ্য ছোট ছোট আক্রমণ করেছেন। ১৯৩৬ সালের বিদ্রোহে ব্রিটিশ দখলদারবিরোধী ভূমিকার জন্য তাঁকে কারাভোগ করতে হয়। শাইখ মুসা জিবরিলের বেড়ে ওঠা এবং তাঁর অন্তরে দ্বীন ইসলামের প্রতি ভালোবাসা বপন, নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
শাইখ জিবরিলের চরিত্রপটে বিনয় খোদাই করা। শুধু এই বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি সবসময় বিশদ প্রশংসিত জীবনী এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। তবে তাঁর অর্জন আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। তিনি ডিয়ার বর্নের মহান মসজিদের নির্মাতা। আগে এটি একটি সামাজিক ক্লাব ছিল। তাঁর কঠোর সংগ্রামের ফলে এটা মসজিদে রূপ নেয়। তিনি অফিসিয়াল মুখপাত্র ও প্রধান বক্তায় পরিণত হন। বিশুদ্ধ তাওহিদের প্রসারে তাঁর সাহসী পদক্ষেপের ফলে বিশেষত আশির দশকে শিয়া মতবাদের উত্থানকালে মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাঁকে তাঁর মসজিদ থেকে উৎখাত করা হয়। সালাফি মানহাজ প্রসারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকায় জীবনের শেষার্ধ্বে এসে কারাভোগ পর্যন্ত করেন তিনি।[৬]
প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েও অবিচল অপ্রতিরোধ্য শাইখ জিবরিল অবিশ্রান্তভাবে মেহনত করে গেছেন। তাঁর ইলম, প্রজ্ঞা, আখলাক ও চরম ধৈর্যের ফলে হাজার হাজার মানুষের কাছে তাঁর লেকচার পৌঁছে গেছে। বহু মানুষ ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে। আল্লাহর ইবাদতে তাঁর আকুল আত্মত্যাগের ফলে সারাজীবন ইলম অর্জন, শিক্ষাদান ও সালাফি মানহাজের প্রসারে নিয়োজিত থেকেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যা ছিল একদমই নতুন। এমনকি এই বয়সে এসেও তিনি সমাজের প্রতি অবিচলভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এখন পর্যন্ত তিনি তাঁর ইলম অর্জন ও শিক্ষাদানকে আরও ব্যাপক এবং সমৃদ্ধ করে চলেছেন। সেই সাথে রয়েছেন ম্যারিজ কাউন্সিলর হিসেবে কর্তব্যরত। গভীর প্রজ্ঞা ও সহানুভূতির হাতিয়ারে সজ্জিত হয়ে তিনি হাজার হাজার বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা করেছেন এবং অগণিত দম্পতিকে আরও সুস্থ দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করেছেন। এ সবকিছু করছেন বিনয়ের সাথে এবং সব সাফল্যকে সবসময় আল্লাহর কুদরাতি হিদায়াতের দিকে নিসবত করে।[৭]
তিনি উম্মু মুসার সাথে একযোগে বিশ্বব্যাপী তাঁর দাওয়াহকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি শত শত বইয়ের রচয়িতা, যার অধিকাংশ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মাঝে কিছু পাণ্ডুলিপি রয়ে গেছে, যার হাতে গোণা কয়েকটি মাত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশুদ্ধ তাওহিদ শিক্ষার সর্বজনীন বিস্তার লাভ সম্ভব হয়েছে Light of the Truth পরিবারের নিষ্ঠাবান তালিবুল ইলমদের কারণে, যারা সযত্নে শাইখ মুসা জিবরিল ও উম্ম মুসার তত্ত্বাবধানে তাঁর রচনাবলি প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
আল্লাহ শাইখকে হিফাযাত করুন এবং তাঁকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন। তাঁর নেক আমলগুলো কবুল করে নিন এবং এর মাধ্যমে তাঁর নেক আমলের পাল্লা ভারি করুন। আল্লাহ শাইখ ও তাঁর পরিবারের ওপর হাসুন এবং দুনিয়া-আখিরাতে তাঁকে সর্বোত্তম প্রতিফল দান করুন।
مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
‘মুমিনদের মাঝে কেউ কেউ আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছে। তাদের কেউ কেউ প্রাণ দিয়েছে, আবার কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের সংকল্পে কোনো পরিবর্তন করেনি।’ [সুরা আল-আহযাব, ৩৩ : ২৩]
____________
[ ভাষা-সম্পাদনা : অনুবাদ ও সম্পাদনা পর্ষদ ]
টীকা :
[১] শাইখ মুসা আবদুল্লাহ জিবরিল ১৯৩৮ (মতান্তরে ১৯৩৯) সালে ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে বসবাস শুরু করেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘকাল তিনি ফিলিস্তিনে প্রবেশের অনুমতি পাননি। ৬৫ বছরে প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর জন্মভূমি ফিলিস্তিনে ফেরা ও বসবাসের অনুমতি পান। [অনুবাদক]
[২] তাঁর সন্তান শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিলের বয়স যখন এগারো বছর, সে সময় তিনি তাঁকে সাথে নিয়ে মদিনায় ইলম শিক্ষা করেন এবং সেখানে বেশ কিছুকাল অবস্থান করেন। [অনুবাদক]
[৩] পাকিস্তানের বিখ্যাত আলিম শাইখ ইহসান ইলাহি জহির ছিলেন তাঁর সহপাঠী ও বন্ধু। [অনুবাদক]
[৪] দীর্ঘ দশ বছর কারাভোগের পর ষাটোর্ধ্ব শাইখ মুসা কারাগার থেকে বাড়ি ফেরার মাঝপথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ছেলে শাইখ আহমাদ জিবরিল তখনো কারাবন্দি। শাইখ মুসা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যেমন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা, তাঁর জন্য তিনি (স্ত্রী) তেমন ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন। [অনুবাদক]
[৫] শাইখ ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ তাঁর থেকে ইলম গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতেন। [অনুবাদক]
[৬] হকের পক্ষে নিরলস আহ্বানকারী এই দায়িকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৪ সালে—ঈদুল ফিতরের ঠিক দুদিন আগে—৬৬ বছর বয়সে তাঁর পুত্রসহ আটক করে এবং জালিয়াতিসহ মোট বিয়াল্লিশটি মামলায় অভিযুক্ত করে। বার্ধক্যে উপনীত হয়েও কারাগারের নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখে তিনি ছিলেন অকুতোভয় এবং ইমানের তারুণ্যে তেজদীপ্ত। কারাগারে তাঁর দিনরাত সালাত ও কুরআন তিলাওয়াতের মাঝে অতিবাহিত হয়েছে। তিনি গভীর রাতে ফুঁপিয়ে কাঁদতেন। সাজদাহয় আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করতেন। তিনি কিছুটা সশব্দে কুরআন তিলাওয়াত করতে পছন্দ করতেন আর বন্দিরাও তাঁর কণ্ঠে সুরা কাহাফের তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসত। কেউ কেউ চিৎকার করে তাঁর কাছে নাসিহা চাইত। সলিটারি সেলে থাকা অবস্থায় তাঁর কাছে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। চার বছর দশ মাস কারাভোগের পর ২০০৯ সালে তিনি মুক্তি পান। [অনুবাদক]
[৭] ব্যক্তিজীবনে তিনি সবসময় হাসিখুশি একজন মানুষ। যা-ই ঘটুক না কেন, তাঁর মাঝে কখনো অসন্তোষের ছাপ দেখা যায়নি। তাঁকে সবসময় ধৈর্যশীল ও পরিতৃপ্ত দেখা গেছে, এমনকি কারাগারেও। কারাগারে তিনি একবার তাঁর সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘প্রিয়, আমাদের সাথে যদি এমন না ঘটত, তাহলে আমি আমার ইমান নিয়ে সংশয়ে থাকতাম। এই পরীক্ষার সম্মুখীন না হলে আমি বরং আমাদের মানহাজ নিয়েই দ্বিধান্বিত হতাম।’ [অনুবাদক]