শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি : সত্যের প্রতিভূ

সংকলন ও ভাষান্তর : তাইব হোসেন

জন্ম ও পরিচয় :  পুরো পরিচয় আবু আবদুল্লাহ হামুদ বিন আবদুল্লাহ বিন উকলা বিন মুহাম্মাদ বিন আলি বিন উকলা আশ-শুয়াইবি আল-খালিদি। তিনি বনু খালিদ গোত্রের লোক। তাঁর পঞ্চম প্রপিতামহ (উকলা) জাযিরাতুল আরবের পূর্ব প্রদেশ থেকে শাকরায় চলে আসেন। তারপর কাসিমে এসে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। শাইখ হামুদ ১৩৪৬ হিজরিতে (১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ) কাসিম প্রদেশে অবস্থিত বুরাইদাহর আশ-শাক্কাহ নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন।

 

পড়াশোনা ও ইলম-অর্জন : ছয় বছর বয়স থেকেই শাইখের পড়ালেখা শুরু। ১৩৫২ হিজরিতে (১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ) সাত বছর বয়সে গুটিবসন্তের ফলে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। শাইখ আবদুল্লাহ বিন মুবারাক আল-উমারির তত্ত্বাবধানে কুরআন হিফয শুরু করেন। ১৩৫৯ হিজরিতে (১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) তেরো বছর বয়সে তিনি কুরআন-হিফয সম্পন্ন করেন। তবে ১৩৫১ হিজরিতে (১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ) তিনি হিফয ও তাজবিদে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর বড় হয়ে উঠা ও শিক্ষাদীক্ষার পেছনে তাঁর বাবার অবদান ছিল অনেক বেশি। তিনি তাঁর ছেলেকে তালিবুল ইলম বানাতে আগ্রহী ছিলেন। কুরআন-হিফয করার পর শাইখ হামুদ তাঁর বাবার সাথে খেজুর বাগানে যতটুকু পারতেন কৃষিকাজ করতেন। ১৩৬৭ হিজরিতে (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ) বাবার নির্দেশে ইলম-অর্জনের জন্য রিয়াদে আসেন। শাইখ আবদুল লতিফ বিন ইবরাহিম আলুশ-শাইখের অধীনে তিনি অধ্যয়ন শুরু করেন। ‘আল-আজরুমিয়াহ’, ‘উসুলুস সালাসাহ’, ‘আররাহবিয়াহ ফিল ফারাইদ’ ওআলকাওয়ায়িদুল আরবাআহ’ কিতাবগুলো বুঝে মুখস্থ করেন, অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন। ১৩৬৮ হিজরিতে (১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ) শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ-শাইখের অধীনে অধ্যয়নের জন্য যান। ‘যাদুল মুস্তাকনি’, ‘কিতাবুত তাওহিদ’, ‘কাশফুশ শুবুহাত’, ‘আল-ওয়াসিতিয়াহ’, নাওয়াবির চল্লিশ হাদিস, ‘আলফিয়াতু ইবনি মালিক’, ‘বুলগুল মারাম’ দিয়ে পড়া শুরু করেন। আবশ্যক শর্ত হিসেবে বুনিয়াদিভাবে সবাইকেই এ কিতাবগুলো পড়তে হতো। ‘আত-তাহাবিয়াহ’, ইমাম সাফারিনির ‘আদ-দুররাতুল মুদিয়াহ’ ও ইবনু তাইমিয়াহর ‘আল-হামাবিয়াহ’ ১৩৬৮ হিজরি (১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলুশ-শাইখের কাছে একান্তভাবে পড়তে থাকেন। সুরা ফাতিহার মতো করে শাইখ হামুদ এ সবগুলো বই মুখস্থ করেন। ১৩৭১ হিজরিতে তিনি ‘আল-মাহাদুল ইলমি’-তে ভর্তি হন। তাঁর জীবনে শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলুশ-শাইখের বিশাল প্রভাব রয়েছে।

 

শাইখের কয়েকজন শিক্ষক :

১. শাইখ আবদুল আযিয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি তাঁকে তাওহিদ ও হাদিস পড়িয়েছেন।

২. শাইখ মুহাম্মাদ আল-আমিন আশ-শানকিতি।

৩. শাইখ আবদুর রহমান আল-আফরিকি। তিনি হাদিসবিশেষজ্ঞ একজন আলিম।

৪. শাইখ আবদুল আযিয বিন রাশিদ। তিনি তাঁকে ফিকহ পড়িয়েছেন।

৫. শাইখ আবদুল্লাহ আল-খুলাইফি ও শাইখ হামাদ আল-জাসির তাঁকে বাক্যশৈলী ও শ্রুতলিপি শিক্ষাদান করেছেন।

৬. মিশরিয় কিছু আলিম তাঁকে নাহু (ব্যাকরণ) ও বালাগাত (অলঙ্কারশাস্ত্র) শিক্ষাদান করেন। যেমন, শাইখ ইউসুফ উমার হুসনাইন, শাইখ আবদুল লতিফ সারহান ও শাইখ ইউসুফ আদ-দাবা।

৭. শাইখ সাউদ বিন রাশুদ। তিনি রিয়াদ কোর্টের বিচারক ছিলেন।

৮. শাইখ ইবরাহিম বিন সুলাইমান।

 

শিক্ষকতা জীবন : শরিয়াহ অনুষদ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তাঁকে ‘ওয়াদি আদ-দাওয়াসির’ শহরের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ জন্য শাইখ মুহাম্মাদ আল-আমিন আশ-শানকিতি শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম আলুশ-শাইখকে বলেন, শাইখ হামুদ বিচারকাজে নিয়োগ পেতে পারেন না, তিনি শিক্ষকতাতেই বেশ যোগ্য। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম বিচারকাজে কাউকে নিয়োগ করলে কখনো আর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতেন না, যা-ই ঘটুক সিদ্ধান্তে অনড় থাকতেন। কিন্তু তিনি শাইখ আশ-শানকিতিকে অনেক সম্মান করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। ফলে তিনি শাইখ আশ-শানকিতির কথা মেনে নেন। ১৩৭৬ হিজরিতে (১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ) ‘আল-মাহাদুল ইলমি’-তে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর ১৩৭৭ হিজরিতে শরিয়াহ অনুষদের শিক্ষক হন। 1৩৭৭-১৪০৬/১৪০৭ হিজরি (১৯৫৬-১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতা করেন এবং অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। এরপর তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হয়। মাহাদ ও অনুষদে যত বিষয় পড়ানো হয়, তার সবগুলোই তিনি সেখানে পড়াতেন। যেমন, তাওহিদ, ফিকহ, ফারায়িদ, হাদিস, উসুল, বালাগাত, নাহু ইত্যাদি। তিনি কিছুসংখ্যক পিএইচডি ও মাস্টার্স থিসিসের তত্ত্বাবধানও (supervise) করেন। শাইখ হামুদ ছাত্রদের শিক্ষাদানে খুবই আন্তরিক ছিলেন। তাঁদের খোঁজখবর নিতেন, অবস্থা সম্পর্কে জানতেন, সান্ত্বনা দিতেন। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার ফোন নাম্বার খুঁজে বের করে ফোন করতেন। তার অবস্থা জানতেন, অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করতেন। বেশকজন আলিম তাঁর হাতেই গ্রাজুয়েট হন। তাঁদের মাঝে শাইখ আলি আল-খুদাইর অন্যতম।

 

শাইখ হামুদের কয়েকজন ছাত্র :

১. ‘হাইয়াতু কিবারিল উলামা’র প্রধান, সৌদির বর্তমান মুফতি আবদুল আযিয আলুশ-শাইখ।

২. ধর্মবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুহসিন আত-তুরকি।

৩. বিচারমন্ত্রী ড. আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ-শাইখ।

৪. ড. সালিহ আল-ফাওযান, ‘হাইয়াতু কিবারিল উলামা’র সদস্য।

৫. শাইখ গাইহাব আল-গাইহাব।

৬.শাইখ আবদুর রাহমান বিন সালিহ আল-জাবর, বিচারক।

৭. শাইখ আবদুর রাহমান বিন গাইস, বিচারক।

৮. শাইখ আবদুর রাহমান বিন আবদুল্লাহ বিন আল-আজলান, সাবেক বিচারালয়প্রধান, কাসিম প্রদেশ।

৯. শাইখ সুলাইমান বিন মুহান্না, রিয়াদ কোর্টের প্রধান।

১০. শাইখ আবদুল আযিয বিন আবদুর রহমান আস-সায়িদ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ কমিটির প্রধান।

১১. শাইখ মুহাম্মাদ বিন মুহাওয়াস, তদন্ত ও বিচারপরিচালনা প্রধান।

১২. শাইখ ড. আবদুল্লাহ আল-গুনাইমান।

১৩. শাইখ হামাদ বিন ফারইয়ান, সাবেক এটর্নি, মন্ত্রী (বিচারমন্ত্রণালয়)।

১৪. শাইখ ইবরাহিম বিন দাউদ, এটর্নি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৫. শাইখ আবদুল আযিয বিন সালিহ আল-জুয়ি।

১৬. শাইখ সালিহ আল-লুহাইদান, সর্বোচ্চ বিচারপরিষদের প্রধান।

১৭. শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন। তবে, শাইখ হামুদ শরিয়াহ অনুষদে কেবল তাঁর স্থলাভিষিক্ত শিক্ষক ছিলেন।

১৮. শাইখ আলি বিন খুদাইর আল-খুদাইর।

১৯. শাইখ সুলাইমান ইবনু নাসির আল-আলওয়ান।

২০. শাইখ নাসির নাসির ইবনু হামাদ আল-ফাহাদ।

২১. শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল।

২২. শাইখ সালমান আল-আওদাহ। তিনি তাঁর কাছে নাহু পড়েছেন।

 

শাইখ যাদের মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি থিসিস সুপারভাইজ করেছেন :

১. ড. আবদুল্লাহ আদ-দাখিল, আল-বাকিরিয়াহ কোর্টের প্রেসিডেন্ট।

২. ড. মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ আস-সাকাকির।

৩. ড. আবদুল্লাহ বিন সালিহ আল-মুশাইকিহ।

৪. ড. আবদুল্লাহ বিন সুলাইমান আল-জাসির।

৫. ড. সালিহ বিন আবদুর রহমান আল-মুহাইমিদ।

৬. ড. মুহাম্মাদ বিন লাহিম।

৭. ড. নাসির আস-সাআবি।

৮. ড. খালিফা আল-খালিফা।

৯. ড. ইবরাহিম বিন মুহাম্মাদ আদ-দুসারি।

১০. ড. ইউসুফ আল-কাদিসহ আরও অনেকে।

‘জামিয়াতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ আল-ইসলামিয়াহ’র পক্ষ থেকে শাইখের সামনে অনেক শিক্ষকের প্রবন্ধ-রচনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের পদোন্নতির জন্য পেশ করা হতো। শাইখ কারও প্রবন্ধ গ্রহণ করতেন, আবার কারও কারও প্রবন্ধ ফিরিয়ে দিতেন। নিচে যাদের প্রবন্ধ শাইখের সামনে পেশ করা হয়েছিল, তাঁদের কজনের নাম দেয়া হলো :

১. আবদুল কাদির শাইবাহ আল-হামাদ।

২. আবু বাকর আল-জাযায়িরি।

৩. মুহাম্মাদ আমান আল-জামি আস-সোমালি।

৪. রাবি বিন হাদি আল-মাদখালি।

৫. মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন।

এ ছাড়াও তিনি শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল-বারকাওয়িকে তাযকিয়াহ দেন। তরুণদের তাঁর কাছ থেকে ইলম নিতে উৎসাহিত করেন। তাঁদের মাঝে চিঠির আদান-প্রদানও হতো।

রচনাবলি : শাইখের বেশকিছু গবেষণাপত্র, রাসায়িল, খণ্ডন, ফাতওয়া রয়েছে। কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, কিছু প্রকাশিতও হয়। তাঁর বেশকিছু ফাতওয়া ‘আল-বুহুসুল ইলমিয়াহ’ কর্তৃক সমর্থিত। শাইখ ফাতওয়াতে খুব গভীর আলোচনা করতেন, দলিল-আদিল্লাহর সমাহার ঘটাতেন। উলামা কিরামের ইখতিলাফগুলো তুলে ধরে সঠিক মতটা প্রাধান্য দিতেন। ঠিক শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহর পদ্ধতির মতোই। শাইখের কিছু বই :

  • তাসহিলুল উসুল ইলা ফাহমি ইলমিল উসুল। বইটি শাইখ আতিয়াহ আস-সালিম ও শাইখ আবদুল মুহসিন আল-আব্বাদের সাথে যৌথভাবে রচিত।
  • আল-ইমামাতুল উযমা। এটি তাঁর গবেষণাগন্থ, যা তিনি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু সাওদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদের জন্য লিখেছিলেন। গবেষণাগ্রন্থটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিন থেকে প্রকাশিতও হয়।
  • আল-বারাহিনুল মুতাযাহিরাহ।
  • শারহু শুরুতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
  • আকিদাতু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ।
  • শারহুল আকিদাতিত তাহাবিয়াহ।
  • কিতাবুত তাওহিদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ।
  • ‘আত-তাদমুরিয়াহ’র ব্যাখ্যাগ্রন্থ।
  • ‘আল-ওয়াসিতিয়াহ’র ব্যাখ্যাগ্রন্থ।
  • ‘আলফিয়াতু ইবনি মালিক’ গ্রন্থের তালিক (টীকা)।
  • সুবুলুস-সালাম শারহু বুলুগিল মারাম গ্রন্থের তালিক (টীকা)।
  • ইমাম বারবাহারির শারহুস সুন্নাহ গ্রন্থের কিছু অংশের ব্যাখ্যা।
  • ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম গ্রন্থের তালিক (টীকা)।
  • ইমাম আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বলের কিতাবুস সুন্নাহ গ্রন্থের তালিক (টীকা)।
  • আল-আরজুমিয়াহ কিতাবের মূল মতনের ব্যাখ্যা।

মাকালাত ও রাসায়িল :

  • ইলা হুক্কামিল আরাব ওয়াল মুসলিমিন।
  • আল-বায়ানুস সুলাসি ফির-রাদ্দি আলাল হাইয়াহ।
  • বায়ানুন মিম্ম হাসালা মিন লাবসিন ফি শুরুতিল ইফতা।
  • বায়ানুন লির-রায়িসিল হালি লি মুনাজ্জামাতিল মুতামারিল ইসলামি।
  • বায়ানুন মিন আহলিল ইলমি ফিল হাসসি আলাল মুকাতাআহ।
  • রিসালাতুন ফি মাশরুইয়াতি কুনুতিল নাওয়াযিল।
  • আর-রাদ্দু আলা আ-ইফতিরাআতিল আনবারি।

এ ছাড়াও শাইখের ফাতওয়া, খুতবা, লেখনী অনলাইনে ছড়িয়ে আছে।

ইবাদত ও আমল : শাইখ খুব ইবাদতগুজার বান্দা ছিলেন। আল্লাহ তাঁর জন্য রাতের ইবাদত সহজ করে দিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ের ভাষ্যমতে তিনি রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে ফযরের সালাতের জন্য ডাক দেয়া অবধি কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকতেন। তিনি সপ্তাহে কুরআন খতম করতেন। শিক্ষকতা, মুসলিমদের সাম্প্রতিক সমস্যাবলির খোঁজখবর নেয়া ইত্যাদি তাঁর এ আমলে প্রতিবন্ধক হতো না। তিনি জেলে থাকাবস্থায় চল্লিশবার কুরআন খতম করেন। অথচ তিনি প্রায় চল্লিশ দিন জেলে থেকেছিলেন। শাইখ ছিলেন উদারহস্তের অধিকারী। তিনি মানুষদের গোপনে দান করতে পছন্দ করতেন। একবার এক গরিব লোককে দান করে বললেন, সে যেন এটা কাউকে না বলে। শাইখের মৃত্যুর পর ঠিকই এগুলো প্রকাশ পেয়ে যায়। ইলমের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কিছু ছাত্রকে শাইখ অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন, সান্ত্বনা দিতেন।

দাওয়াত ও আপসহীনতা : শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুয়াইবি তাওহিদ ও হকের প্রতি আপসহীন এক চরিত্রের উদাহরণ। বৃদ্ধ ও অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও সত্যপ্রকাশে তিনি পিছপা হননি। ১৪১৭ হিজরিতে চল্লিশ দিনেরও বেশি সময় তিনি বন্দি ছিলেন। বেশ কবার ফাতওয়াপ্রদানে তাঁকে বিরত রাখা হয়। এরপরও তিনি দমেননি। তাওহিদ ও সুন্নাহর পথে নির্ভীক দায়ি হিসেবে নবির আসল ওয়ারিশের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরই তিন ছাত্র শাইখ সুলাইমান ইবনু নাসির আল-আলওয়ান, শাইখ আলি বিন খুদাইর আল-খুদাইর, শাইখ নাসির ইবনু হামাদ আল-ফাহাদ আজও কারাগারে বন্দিজীবন পার করছেন। উসতাযের রেখে যাওয়া সঠিক শিক্ষার ব্যাপারে তাঁরা আপস করেননি। শাইখ মুসলিমদের সামসময়িক খোঁজখবর রাখতেন। এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। এ জন্য প্রতিদিন সময়-করে ইন্টারনেটে খবর শুনতেন (তাঁর সামনে পড়া হতো)। তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা বসে শুনতেন, বিরক্ত হতেন না। মুসলিমদের সামসময়িক ঘটনাপ্রবাহ তাঁকে উদ্‌বিগ্ন করত। মুসলিমদের পরিস্থিতি জানার আগ্রহ এত ছিল যে, মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগেও তিনি আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ, তৎকালীন ইসলামি ইমারাত, মুজাহিদিন ও তাঁদের নতুন সংবাদ নিয়ে কথা বলছিলেন। কারাবন্দিদের শাইখ ভুলেননি। তাঁর সময়ে কিছু বন্দি আলিম ও তালিবুল ইলমের ব্যাপারে তিনি উদ্‌বিগ্ন ছিলেন। মাঝে মাঝে তাঁদের সবর ও ইসতিকামাতের জন্য নফল সালাত আদায় করতেন।

মৃত্যু : এ মহান শাইখ ১৪২২ হিজরির ৪ যুলকাদা রোজ শুক্রবার (জানুয়ারি ১৮, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন। উম্মাহ একজন যোগ্য রাহবার হারাল। ও আল্লাহ, আপনি শাইখকে আপনার রহমতের চাদরে আবৃত করুন, তাঁকে জান্নাতে সম্মানজনক মর্যাদায় আসীন করুন।

Leave a Reply